কলিজার উপকারীতা ও গরুর কলিজা ভুনার সহজ রেসিপি

প্রাণীর দেহের যেসকল অংশগুলো আমরা খেয়ে থাকি তার মধ্যে কলিজা একটি অন্যতম অংশ। খাবার হিসেবে কলিজা গ্রহণ করার ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার সাধিত হয়ে থাকে। খাবার হিসেবে কলিজা আমাদের শরীরের কোন কোন ধরনের উপকার করে থাকে আসুন তা আমরা জানার চেষ্টা করি।

মানব শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান রক্ত। কোনও মানুষ রক্তহীন বাচতে পারে না। আর এই রক্ত তৈরির প্রধান উপাদান হচ্ছে আয়রন। এই আয়রন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে গরু, ছাগল বা ভেড়ার কলিজায়। রক্তের প্রধান উপাদানের নাম লোহিত রক্ত কণিকা (আরবিসি)। এই কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি ও পুষ্ট করার জন্য আয়রনের গুরুত্ব অপরিহার্য। আর শরীরের আয়রন বৃদ্ধিতে কলিজা খাওয়া বিশেষ উপকারী।

বড় কোনও অপারেশনের পর, প্রচুর রক্তক্ষরণের পর, গর্ভাবস্থায়, সন্তান জন্মদান বা মাতৃদুগ্ধ দানকালীন সময়ে কলিজা খাওয়া যথেষ্ট উপকারী। তবে হৃৎপিণ্ডের বাইপাস সার্জারি বা রিং পরানো, উচ্চ রক্তচাপ জনিত রক্তক্ষরণের পরে কলিজা খাওয়া ঠিক নয়। কারণ, এতে দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। শিশু থেকে ৪০ বছর বয়স্ক মানুষের জন্য যথেষ্ট দরকারি খাদ্য উপাদান হলো কলিজা। কলিজায় ভিটামিন ‘এ’এবং আমিষ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এই উপাদানগুলো দেহের বর্ধনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।

কলিজায় আরও রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন বি-সিক্স। কলিজার ভিটামিন ‘এ’ শীতকালীন ঠাণ্ডা-কাশির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে । আমাদের শরীরের শিরা-উপশিরার ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়। কলিজার কোলাজেন ও ইলাস্টিন নামের উপকরণ এই শিরা- উপশিরার দেয়ালকে প্রসারিত করে । ফলে রক্ত প্রবাহ সহজ হয়।

সেলেনিয়াম নামের আরও একটি জরুরি উপাদান আছে এই কলিজায়। সেলেনিয়াম হ্রাস করে ক্লোন ক্যানসারের পরিমাণ। এছাড়াও সেলেনিয়াম শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ইনফেকশন, শরীরের জয়েন্টে ব্যথা, কৃমির পরিমাণকে কমিয়ে দেয়।

আমাদের শরীরে ঠাণ্ডা জনিত জ্বর, টনসিলাইটিস, সর্দি সৃষ্টিকারী ভাইরাস নামক জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে জিংক। কলিজায় রয়েছে মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে জিংক। তাই শরীরের জিংকের চাহিদা মেটানোর জন্য কলিজা খাওয়া খুবই জরুরী।

ছোটদের জন্য মুরগির কলিজাও উপকারী। শিশু থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত বয়সীদের নিয়মিত কলিজা খাওয়া উচিত। বয়স ৪০ অতিক্রম করলে কলিজা না খাওয়ায় উত্তম, আর যদি খেতেই হয় তবে অল্প পরিমাণে দীর্ঘ দিন পর পর।

যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আছে বা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি এমন ব্যক্তিদের জন্য কলিজা খাওয়া উচিত না। সঠিক বয়সে পরিমাণ মতো নিয়মিত কলিজা খেলে আমাদের শরীরের সুস্থতায় বিশেষ অবদান রাখে কলিজা।

গরুর কলিজা খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। আয়রন সমৃদ্ধ এই খাবার শরীরের রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। গরুর কলিজা খেতে কমবেশি সবাই পছন্দ করেন।

বিশেষ করে কলিজা ভুনার নাম শুনলেই জিভে পানি চলে আসে অনেকেরই। সহজ উপায়ে কলিজা ভুনা কীভাবে করবেন জেনে নিন রেসিপি সম্পর্কে-

উপকরণ:

১. গরুর কলিজা ১ কেজি

২. পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ

৩. পেঁয়াজ বাটা ৩ টেবিল চামচ

৪. আদা বাটা ১ চা চামচ

৫. রসুন বাটা ১ চা চামচ

৬. গরম মসলা পাউডার ১ চা চামচ

৭. এলাচ ৩/৪টি

৮. সয়াবিন তেল আধা কাপ

৯. লবণ স্বাদমতো

১০. হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ

১১. মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ

১২. জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ

১৩. ধনিয়া গুঁড়া ১ চা চামচ

১৪. তেজপাতা ২টি

১৫. দারুচিনি ২ টুকরো ও

১৬. কাঁচা মরিচ ৬/৭টি।

পদ্ধতি: প্রথমে গরুর কলিজা কেটে গরম পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। গরম পানি দিয়ে কলিজা কয়েকবার ধুয়ে চালনিতে ছেঁকে রাখতে হবে।

চুলায় প্যান বসিয়ে তাতে তেল দিতে হবে। তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিতে হবে। পেঁয়াজ হালকা ভাজা হলে এবার বাটা মসলা, গুঁড়া মসলা, লবণ সব দিয়ে অল্প পানি দিয়ে মসলা কষিয়ে নিতে হবে।

এবার এর মধ্যে কলিজা দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। পানি শুকিয়ে গেলে ঢাকনা সরিয়ে আবার অল্প পানি দিয়ে আস্ত কাঁচা মরিচ, এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

কলিজা সেদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে মাখা মাখা হয়ে এলে নামিয়ে ফেলতে হবে। ব্যাস তৈরি হয়ে যাবে গরুর কলিজা রান্না। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন সুস্বাদু এই পদ।