ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, \”এন এ্যাপেল আ ডে কিপ দ্য ডক্টর অ্যাওয়ে\” যার অর্থ, \”প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে চিকিৎসকের প্রয়োজন হয় না\”। ১৮৮৬ সালে এমন কথার প্রথম প্রচলন ঘটে থাকলেও প্রায় ১৩০ বছর পর এখনো কিছুটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ডাক্তাররা সে কথারই পুনরাবৃত্তি করছেন। তাহলে এ থেকেই বুঝাই যাচ্ছে প্রতিদিন আপেল খাওয়ার গুরুত্ব কতখানি?
তাহলে আর দেরী কেন? আসুন জেনে নিই আমাদের জিবনে আপেলের প্রয়োজনীয়তা সমূহকে-
১/ ঝকঝকে সাদা এবং সুস্থ দাঁত
টুথব্রাশের কাজ আপেল করে দেবে এমন কথা বলা হচ্ছে না। তবে আপেল খাওয়া এবং চিবানোর সময় মুখের ভেতরে ‘স্যালাইভা’ অনেক বেশি পরিমাণে উৎপাদন হয়। যার ফলে দাঁতের ক্ষয় হওয়ার সম্ভবনা এবং মুখের ভেতরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণের সম্ভবনা অনেক কমে যায়।
২/ আলঝেইমার্স থেকে দূরে থাকা যায়
সাম্প্রকিত সময়ের এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, প্রতিদিন আপেলের রস খেলে আলঝেইমার্স থেকে দূরে থাকা যায়। এর সাথে আপেলের রস মস্তিষ্কের বয়স হওয়া প্রভাব থেকেও রক্ষা করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল ইঁদুরকে অন্যনায় খাবারের সাথে আপেল খাওয়ানো হতো তাদের নিউরোট্রান্সমিটার অ্যাসিটাইলকোলিন এর মাত্রা অনেক বেশী থাকে এবং গোলকধাঁধার খেলায় সে সকল ইঁদুর অনেক ভালো করে।
৩/ সকল প্রকারের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
আমেরিকা এসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ এর গবেষকেরা গবেষণা করে একমত হয়েছেন যে, ফ্লেভানলপূর্ণ আপেল খাওয়ার ফলে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার এর বৃদ্ধি ২৩% পর্যন্ত হ্রাস পায়! কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা আপেলে বেশ কিছু উপাদান পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে ট্রাইট্রেপেনয়েডস। যা আপেলের খোসায় থাকে। এটি লিভার, কোলোন এবং স্তন্য ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৪/ ডায়বেটিস হবার সম্ভবনা কমিয়ে দেয়
যে সকল নারী প্রতিদিন অন্তত একটি করে আপেল খান, তাদের টাইপ-২ ডায়বেটিস হবার সম্ভবনা শতকরা ২৮ ভাগ কমে যায়! আপেলে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় আঁশ থাকে। যা রক্তে থাকা সুগার এর মাত্রা কমিয়ে দেয়।
৫/ কোলেষ্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে আনে
আপেলে থাকা দ্রবণীয় আঁশ অন্ত্রের চর্বির সাথে মিশে যায়। যার ফলে এটি রক্তের কোলেষ্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে এনে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।
৬/ হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
শরীর বিষয়ক এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে অনেক উচ্চমাত্রার আঁশযুক্ত খাবার যাওয়ার ফলে আর্টারিতে কোলেষ্টেরল জমতে পারে না। আর্টারিতে কোলেষ্টেরল জমার ফলে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবক ক্রিয়া ব্যহত হয়। ফলে হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়।
৭/ কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা ডায়েরিয়ার সমস্যা সমাধানে আপেল
উভয় সমস্যার খুব দারুণ সমাধান হিসেবে আপেল খাওয়া যেতে পারে। কারণ আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। এই আশা কোলন থেকে অতিরিক্ত পানি শুষে নিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে সাহয্য করে। আবার ডায়েরিয়ার সমস্যার জন্য মূত্র থেকে অতিরিক্ত পানি শোষণের মাধ্যমে ডায়েরিয়ার প্রভাব কমিয়ে আনে।
৮/ চোখের ছানি পড়ার সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে
যদিও আগেকার গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এর ফলাফল সম্পর্কে দ্বিমত প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণায় সকল সমস্যা মিটে গেছে। দীর্ঘ সময়ের গবেষণা থেকে জানা গেছে, খাদ্য তালিকায় অনেক বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টপূর্ণ খাবার যেমন: আপেল থাকলে, চোখে ছানি পড়ার সম্ভবনা শতকরা ১০-১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
৯/ লিভারকে পরিশোধিত করে
আমরা হরদম বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকারন খাদ্য গ্রহণ করি। তার মাঝে থাকে নানা ধরণের খাদ্য এবং পানীয়। লিভার সেই সকল খাদ্য উপাদানের বিষাক্ত পদার্থকে পরিষ্কার করার দায়িত্ব পালিন করে থাকে। সেই লিভার এর সুস্থতা এবং লিভার কে ডিটক্সিফাই করার জন্যে ডাক্তাররা আপেল খাওয়ার কথা বলে থাকেন।
১০/ ওজন কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
বাড়তি ওজন শরীরের নানান ধরণের রোগের জন্য দায়ী। তার মধ্যে থাকে স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ-২ ডায়বেটিস, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে ডাক্তাররা সবসময় আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আঁশযুক্ত খবার খাওয়ার ফলে পেট ভরে যায় কিন্তু খুব বেশী ক্যালরি গ্রহণ করা হয় না। সেক্ষেত্রে আপেল খুব দারুণ একটি একটি আঁশযুক্ত খাবার।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে