বর্তমানে প্রযুক্তি মানুষের জীবনে বড় প্রভাব ফেলছে। শিশু-কিশোরদের মধ্যেও বাড়ছে স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার। ডিভাইস-আসক্তি শিশু-কিশোরের বেড়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে। এখনকার প্রজন্ম স্মার্টফোন আর অনলাইনভিত্তিক নানা গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক সময় অতিরিক্ত সময় ধরে খেলা অনলাইন গেম আসক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও অনলাইন গেম সম্পর্কে ঠিকমতো ধারণা না থাকায় অভিভাবকেরাও সন্তানের ঠিকমতো খোঁজখবর রাখতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে তাই সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
তাহলে জেনে নেয়া যাক সচেতনতামূলক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে:
* সব গেম সবার জন্য নয়:
মনে রাখতে হবে, গেমের মতো সব ডিজিটাল কনটেন্ট সব বয়সের ব্যবহারকারীর জন্য নয়। আপনার সন্তান কোন গেমিং অ্যাপ ডাউনলোড করছে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। অভিভাবক হিসেবে গেমিং অ্যাপ ডাউনলোডের ক্ষেত্রে নিজেরও সচেতন থাকা জরুরি। অনেক গেমিং অ্যাপে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চাইতে পারে। বিশেষজ্ঞরা অ্যাপ স্টোরের বাইরে থেকে কোনো অ্যাপ ডাউনলোডের ক্ষেত্রে সতর্ক করেন।
* গেমে কেনাকাটা:
অনেকে গেমের ক্ষেত্রে অনলাইনে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস হিসেবে বাড়তি ফিচার যুক্ত করে রাখে। তাই, সন্তান যাতে অর্থ খরচ করে গেম খেলায় আসক্ত হয়ে না পড়ে, সে বিষয়টিতে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই গেমিং অ্যাপকে জুয়ার অ্যাপ মনে করেন। সাধারণত গুগল বা অ্যাপল তাদের অ্যাপ স্টোরে জুয়ার অ্যাপ সমর্থন করে না। কিন্তু যেসব গেমিং অ্যাপে কেনাকাটা করার সুযোগ থাকে, সেসব অ্যাপ ডাউনলোড ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে সন্তানকে ধারণা দেওয়া উচিত।
* সব পথ বন্ধ নয়:
নিজের অবসর কাটাতে, সৃজনশীলতা বাড়াতে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে অনেকেই অনলাইন গেম খেলার প্রতি আসক্ত হচ্ছে। শুধু বাসায় বসে থেকে একা এক নয়, অনলাইনে রীতিমতো অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। অফিসে কাজের ফাঁকে কিংবা অবসরে ফেসবুকে বা অন্য কোনো মাধ্যমে ছোট-বড় অনেককেই গেম খেলে সময় পার করতে দেখা যায়। সন্তানের সবকিছুতে বাধা-নিষেধ জারি করলে তখন সে ভিন্ন পথ খুঁজে বের করে। এখন ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ করলে অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করে বিভিন্ন সাইটে যায়। এসব ক্ষেত্রে শিশুর সঙ্গে ভালো-মন্দ বুঝিয়ে বলার দায়িত্ব অভিভাবকের।
* প্যারেন্টাল কন্ট্রোল:
এখন ইন্টারনেটে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের মাধ্যমে শিশুর গেম খেলা নিয়ন্ত্রণের সুবিধা রয়েছে। অভিভাবক চাইলে সন্তানের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারেন। কখন কতটুকু সময় গেম খেলবে বা কোন গেম খেলবে, তা ঠিক করে দিতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পাবজি গেমটির কথা। এটি তৈরি ১৬ বছর বয়সীদের লক্ষ্য করে। অভিভাবক তাঁর কম বয়সী সন্তানের ক্ষেত্রে এটি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এর বাইরে গুগল এবং অ্যাপল উভয় ফোনের জন্য বেশ কিছু সেবা রয়েছে, যা ব্যবহার করে শিশুকে গেম থেকে দূরে রাখা যায়। এ ছাড়া থার্ড পার্টি সেবা তো আছেই।
* গেম সম্পর্কে ভুল ধারণা:
অনলাইনে কার্ড বা বোর্ডভিত্তিক গেম সম্পর্কে অনেকের সঠিক ধারণা নেই। অনলাইনে জনপ্রিয় গেম জিঙ্গা পোকার, লুডো কিং, তিন পাত্তি গোল্ড, ক্যারাম পুলের নির্মাতারা দাবি করেন, এগুলো বিনা মূল্যের গেম। তাদের প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস হিসেবে বাড়তি ফিচার যুক্ত করে রাখেন। কেউ এসব গেম থেকে অর্থ আয়ের প্রলোভন দিলে গেম নির্মাতাদের অভিযোগ দিতে পারেন।
* অপরিচিত বন্ধু নয়:
অনলাইনে গেম খেলার ক্ষেত্রে শিশুকে সচেতনতা শেখাতে হবে। অনলাইনে দলগত গেম খেলতে অনেকে অপরের নির্দেশনায় কাজ করতে পারে। অপরিচিত কারও আদেশ মানার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার, কোনো লিংকে ক্লিক করার মতো বিষয়গুলোর বিপদ সম্পর্কে শিশুকে সচেতন করতে হবে। সন্তান, ভাইবোন বা নিকটজনকে মোবাইলে ও কম্পিউটারে বেশি সময়ে একা বসে থাকতে দেখলে সে কী করছে, তার খোঁজখবর নিতে হবে। সন্তানকে কখনো একা বেশি সময় থাকতে না দেওয়া এবং এসব গেমের কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে।
* পরিবারকে সময় দেওয়া:
সন্তান ও পরিবারের অন্য কোনো সদস্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কি না, সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে। কেউ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়, তাকে সঙ্গ দিতে হবে। কোনো গেম সম্পর্কে সন্তানের কৌতূহল থেকে নেশায় পরিণত হতে পারে। পরিবারের সঙ্গে সময় দিয়ে গেম থেকে সন্তানকে দূরে রাখতে পারেন।