ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে দেশের স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের প্রধান মোহাম্মদ মাহাবুব পাঠানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২৮ জুন সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত মাহাবুব পাঠান দীর্ঘদিন ধরে স্বপরিবারে লিবিয়ায় অবস্থান করে লিবিয়ার বেনগাজীর বাংলাদেশী কমিউনিটিকে নেতৃত্ব প্রদানের আড়ালে মানব পাচার চক্র পরিচালনা করে আসছিলেন। সোমবার (১ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।
জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত মাহাবুব পাঠানের মানব পাচার চক্রটি বাংলাদেশিদের উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়া নিয়ে গিয়ে আটক করত। এরপর তাদের আটক রেখে শারীরীক নির্যাতন করে নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ আদায়ের পর নৌযানের মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করত।
গত ৩১ মে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়া উপকূলে মাহাবুব পাঠানের চক্রের শিকার ৬৪ বাংলাদেশিসহ ৭৫ জন অভিবাসী তিন সপ্তাহ ধরে ভাসতে থাকা অবস্থায় উদ্ধার হন।
পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় তিউনিসিয়ায় থাকা বাংলাদেশিদের ফেরত আনা হয়। তাদের মধ্যে একজন শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার মিলন বেপারী (২৩)। তিনি দেশে ফিরে মাহাবুব পাঠানের বিরুদ্ধে নড়িয়া থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
সিআইডির তদন্তে জানা যায়, চক্রটি মিলন বেপারী ও অন্যান্য ভিকটিমদেরকে এমিরেটস বিমানে করে প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়।
এরপর দুবাই হতে বিমানযোগে মিশর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজী শহরে মাহাবুব পাঠানের ক্যাম্পে তাদেরকে আটক রাখে এবং শারিরীক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমদের পরিবারের নিকট পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
পরে বাদীর মা বিউটি আক্তার আসামিদের দেওয়া ব্যাংক একাউন্টে দুই লক্ষ নিরানব্বই হাজার আটশত বিশ টাকা প্রদান করে এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত চক্রের সদস্য হেনা বেগমকে নগদ চার লক্ষ টাকা প্রদান করে।
এরপর আসামী মাহাবুব পাঠান ও তার সহযোগিরা সুকৌশলে বাদীসহ অন্যান্য ভিকটিমদের ইতালীতে পাঠানোর কথা বলে দ্বিতীয় পর্যায়ে লিবিয়ার ত্রিপলীতে এই চক্রের সক্রিয় সদস্য মনিরের ক্যাম্পে প্রেরণ করে এবং সেখানে বাদী ও ভিকটিমদের নিয়ে আটক করে দ্বিতীয় দফায় শারীরীক নির্যাতন করে টাকা দাবী করে।
এরপর বাদীর মা বিউটি আক্তার পুনরায় হেনা বেগমকে চার লক্ষ টাকা প্রদান করেন। এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে মিলন বেপারীর পরিবার মোট ১০ লক্ষ টাকা প্রদান করে। ১৫ দিন সেখানে আটকে নির্যাতন করে টাকা আদায়ের পর ইতালির উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগরে হাওয়ায় ভাসা একটি প্লাস্টিক নৌকায় আরো কয়েকজনের সঙ্গে মিলনকে তুলে দেয়া হয়।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘মানব পাচারকারীদের দমন ও ভিকটিমদের রক্ষা করতে সিআইডির অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া সাধারণ মানুষকে এই ধরনের চক্র সম্পর্কে সচেতন থাকতে এবং কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে সিআইডিকে জানাতে অনুরোধ করছি।’