দেশের শ্রম আদালতগুলোতে মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তি—দুটোই বেড়েছে। তা সত্ত্বেও বর্তমানে শ্রম আদালতে ২১ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন। আদালতের সংখ্যা বাড়িয়েও মামলার জট কমানো যাচ্ছে না। বরং ওসব মামলার বিচারপ্রার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এরই মধ্যে মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রতার সাতটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অবস্থায় মামলার জট কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে শ্রম আদালতের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা শেষে ওই নির্দেশনা দেওয়া হয়। কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ও ১৩টি শ্রম আদালতের মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আট হাজার ৫২টি মামলা করা হয় এবং আট হাজার ৪৯৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত আট হাজার ৮৫৪টি মামলা দায়ের এবং ১১ হাজার ২৫৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এখনো ওসব আদালতে ২১ হাজার ৬১টি মামলা বিচারাধীন। শ্রম আদালতের দেওয়ানি ও ফৌজদারি—উভয় ধরনের এখতিয়ার থাকায় ভুক্তভোগী যেভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন, শ্রম আদালতে মামলা করতে পারবে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তি—দুটোই বেড়েছে।
তা সত্ত্বেও গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের ১৩টি শ্রম আদালতে মোট ২০ হাজার ২০০টি মামলা এবং শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে ৮৬১টি মামলা বিচারাধীন ছিল। অথচ ২০১৭ সালের একই সময়ে তৎকালীন সাতটি শ্রম আদালত ও শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ছিল ১৬ হাজার ১১৫টি মামলা। প্রয়োজনীয়সংখ্যক আদালত, বিচারক ও সহায়ক জনবল সংকটের অভাবে বছরের পর বছর ধরে এসব মামলা ঝুলে রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যার সঙ্গে মামলার জট বাড়ছে। মামলার জট কমাতে বর্তমান সরকার আগের একটি আপিল ট্রাইব্যুনাল ও সাতটি শ্রম আদালতের সঙ্গে আরো ছয়টি শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করেছে।
তা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না; বরং মামলা নিষ্পত্তিতে হয়রানি বেড়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও গাজীপুর ছাড়া অন্য জেলাগুলোতে শ্রম আদালত না থাকায় শ্রমিকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এরপর মামলাজট ও কখনো বিচারক শূন্যতায় বছরের পর বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। আবার ঢাকার বাইরে শ্রম আদালতে কোনো শ্রমিক নিজের পক্ষে রায় পেলেও মালিকপক্ষের আপিলের কারণে সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে নতুন করে হয়রানিতে পড়তে হয়। কারণ ঢাকার বাইরে কোনো জেলায় আপিল ট্রাইব্যুনাল নেই। শ্রম আইনে ৬০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও একযুগ আগের মামলা আদালতে বিচারাধীন।
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি এইচ এম ইব্রাহিম জানান, শ্রম আদালতের কার্যক্রম নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেখানে মামলাজটের পাশাপাশি শ্রমিকদের হয়রানির বিষয়টিও উঠে এসেছে। কমিটির পক্ষ থেকে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মামলাজটের কারণগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শ্রম আদালতে মামলাজটের কারণ হিসেবে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে সাতটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো শ্রম আইনের জটিলতা, শ্রম আদালতের বিচারকদের বদলি, শ্রম আদালতের সদস্যদের উপস্থিতি, অধিক্ষেত্রজনিত জটিলতা, সহায়ক কর্মচারীদের অদক্ষতা, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অভাব এবং শ্রম আদালত ও শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের স্থান সংকট।