adalat

ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, পুলিশের ২ সদস্যের কারাদণ্ড

অন্যায়ভাবে আটক এবং মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের মামলায় পুলিশের দুই সদস্যসহ তিন জনের সাড়ে ৪ বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক তোফাজ্জল হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডিততরা হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহজাহানপুর থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মনিরুল ইসলাম ও কনস্টেবল এস এম জুলফিকার আলী এবং মো. নূর উদ্দীন আহমেদ নামের এক ব্যক্তি। রায়ে অভিযোগ প্রামাণিত না হওয়ায় মো. নিরব হাসান সজিব নামে এক আসামিকে খালাসও দিয়েছেন আদালত।

রায়ে সাড়ে চার বছর কারাদণ্ডের মধ্যে দণ্ডবিধির ৩৪২ ধারায় ৬ মাস করে কারাদণ্ড ও ৩৮৮ ধারায় ৪ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আসামিদের ৪ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৪ মাসের কারাদণ্ডের আদেশও দিয়েছেন আদালত।

রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণা শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, মামলার বাদী খন্দকার নুরুজ্জামান উবারের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিংয়েরে কাজ করেন। ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই রাত আনুমানিক ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে বাদীর মোবাইল ফোনে উবারের মাধ্যমে মালিবাগ গুলবাগ রোড থেকে একটি কল রিকুয়েস্ট গ্রহণ করেন। রাস্তা কাটা থাকায় কল প্রদানকারী জানান যে, তার ছোট ভাই বাদীকে মালিবাগ মোড়ের ভেতরে স্বপ্ন নামক দোকানের সামনে থেকে পথ দেখিয়ে পিকআপ পয়েন্টে নিয়ে আসবেন। সেই মোতাবেক বাদী স্বপ্ন দোকানের সামনে গেলে নিরব হাসান সজিব পথ দেখানোর কথা বলে মলিবাগ কালসির গলির শেষপ্রান্তে নিয়ে যান।

সেখানে গিয়ে পুলিশের পোশাকে আসামি মনিরুল ও জুলফিকারকে বাদী দেখতে পান। আসামিরা বাদীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করে ও বাদীর গাড়ি তল্লাশি করেন এবং ড্রাইভার সিটের পেছনে হাত বুলিয়ে একটি লম্বা ট্যাপে মোড়ানো ৪/৫টি ট্যাবলেট সাদৃশ্য কিছু বাদীকে দেখান এবং বাদীকে ওই পণ্যের ব্যবসায়ী বলে অভিযুক্ত করেন।

ওই সময় আরেক আসামি সাংবাদিক পরিচয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ও এসএম জুলফিকার বাদীকে ট্যাবলেট ব্যবসায়ী বলে জানান এবং বাদীকে হাতকড়া পরিয়ে আটক রাখে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, এক আসামি বাদীর গাড়িতে ওঠেন এবং গাড়ি চালিয়ে বড় গেট লাগানো খালি এক জায়গায় নিয়ে যেতে বলেন। বাদী সেখানে যাওয়ার পর এক আসামি গেট বন্ধ করে দিয়ে একটি একচালা টিনের ঘরে নিয়ে যান।

এরপর বাদীকে বসতে বলেন। একপর্যায়ে আসামিরা সমঝোতার করতে চাপ প্রয়োগ করেন। বাবু নামে আরেক আসামির সঙ্গে কথা বলে ৬০ হাজার টাকায় সমঝোতা হয়। বাদী টাকা দিতে না চাইলে ২০০টি ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ধরিয়ে দেবেন বলে হুমকি প্রদান করেন। বাদী অসুস্থ ও ডায়াবেটিসের রোগী বললে, শেষমেশ ২৫ হাজার টাকায় রফাদফা হয়।

আসামিদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে শাহজাহানপুর থানায় পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে খন্দকার নুরুজ্জামান মামলাটি দায়ের করেন।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সিদ্দিক ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর চার জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। পরের বছর ২ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালীন সময়ে আদালত ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

Scroll to Top