আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারাদণ্ডের রায়ের সংবাদ। গত সোমবার শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ড পান তিনি। এরপরই দ্রুত বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো এ সংবাদ প্রকাশ করেছে।
সংবাদ প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা, চীনের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, গালফ নিউজ, ফ্রান্স২৪, দ্য গার্ডিয়ান, ব্লুমবার্গ, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো প্রভাবশালী গণমাধ্যম।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল তিনটার দিকে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা বহুল আলোচিত মামলাটি রায় ঘোষণা করেন।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের এই মামলা নিয়ে এর আগে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও শতাধিক নোবেলজয়ী উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। গতকাল মামলায় ইউনূসকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে খবরটি ছড়িয়ে দেয়।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস ৬ মাসের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন। শ্রম আইনের একটি মামলার রায়ে তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। যদিও তার সমর্থকরা এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করে আসছেন।
ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংকের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার কৃতিত্ব দেয়া হয় ৮৩ বছর বয়সী ইউনূসকে। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনূসের বিরুদ্ধে দরিদ্রদের ‘রক্ত চোষা’ বলে অভিযোগ করে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা করেছেন।
এএফপির প্রতিবেদনই বিশ্বের বেশিরভাগ গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে। ভারতের ইংরেজি দৈনিক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ লিখেছে, অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোম্পানির শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন না করা এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেয়া হয়নি-মর্মে অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে চারজনই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গতকাল রায়ের আগে এ মামলার প্রধান প্রসিকিউটর খুরশিদ আলম খান এএফপিকে বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি যে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্যরা শ্রম আইনের বাধ্যতামূলক প্রয়োজনীয়তা লঙ্ঘন করেছেন।’
ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির আরো শতাধিক অভিযোগ রয়েছে। গত মাসে এক মামলার শুনানিতে অংশ নেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশে যে ৫০টির বেশি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তার কোনোটি থেকে নিজে লাভবান হননি। ইউনূস বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠান আমার ব্যক্তিগত লাভের জন্য করা হয়নি।’
তার আইনজীবী খাজা তানভীর এএফপিকে বলেছেন, মামলাটি ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ‘মামলার একমাত্র উদ্দেশ্য হল তাকে বিশ্বের সামনে হয়রানি এবং অপমান করা,’ বলেন তিনি।
গত আগস্টে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৬০ নাগরিক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ‘অব্যাহত বিচারিক হয়রানির’ নিন্দা জানিয়ে একটি যৌথ চিঠি প্রকাশ করেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে শতাধিক নোবেল বিজয়ী ছিলেন। তারা বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘নিরাপত্তা এবং নাগরিক অধিকার’ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
গত সেপ্টেম্বরে ইউনূসের বিরুদ্দে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর পর তাকে ‘হয়রানি’ করা হচ্ছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তা বন্ধ করার আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’।
বার্তা সংস্থা এএফপি, ফ্রান্স২৪ ছাড়াও মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ, ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স, কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা, হংকং-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের গালফ নিউজ, মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম মালয়েশিয়ান ইনসাইট, পাকিস্তানের এআরওয়াই নিউজসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।