পিলখানা ট্রাজেডির ১৪টি বছর পার হয়ে গেলেও বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। হত্যা মামলার বিচার আপিল বিভাগে শুনানির জন্য থাকলেও বিষ্ফোরক মামলা এখনও বিচারিক আদালতে আছে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআরের বিদ্রোহী জওয়ানরা নারকীয় তাণ্ডব চালায়। তাদের হাতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। বিডিআর বিদ্রোহের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। দুই কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনার বিচার সেনা আইনে করার সুপারিশ করা হলেও উচ্চ আদালতের মতামতের পর সরকার প্রচলিত আইনেই এর বিচার করে।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দুইটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর একটি ছিল হত্যা মামলা আর অন্যটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। খুনের মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ২৭৮ জন খালাস পান। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে।
অপরদিকে বিস্ফোরক মামলায় ৮৩৪ জন আসামি আছে। মামলাটি হত্যা মামলার সঙ্গে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিষ্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে মামলাটির বিচারকাজ শেষ হতে বিলম্ব হয়।
বিষ্ফোরক আইনে হওয়া অপর মামলা এখনও ঝুলছে নিম্ন আদালতে। রাষ্ট্রপক্ষের ১ হাজার ৩৪৫ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৫৭ জন।
ঢাকার এক নম্বর মহানগর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আছাদুজ্জামানের বকশীবাজার আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে স্থাপিত আদালতে এ মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করেন। গত এক বছরে ৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে।
হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি প্রক্রিয়ায় আটকে আছেন ৪৬৮ বিডিআর সদস্য। আসামিপক্ষের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিস্ফোরক মামলাটির কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। মামলাটি নিষ্পত্তিতে যথাযথ তৎপরতা নেই রাষ্ট্রপক্ষের। তাই বিচার শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষ বরাবরের মতোই দাবি করেছেন, সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ বছরের মধ্যেই মামলার বিচারকাজ শেষ হবে।
এই মামলায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণের সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নয়। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ২৭৮ জন আসামি হত্যা মামলায় খালাস পান। এছাড়া স্বল্পমেয়াদে সাজা ভোগ করে আরও ১৯০ আসামি মুক্তির অপেক্ষায় আছেন। তাই এই ৪৬৮ জন আসামি মূল মামলায় খালাস বা সাজাভোগ করেও মুক্তি পাচ্ছেন না। এমনকি বিষ্ফোরক মামলায় জামিন নামঞ্জুরের আদেশও আমাদের সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই জামিন আবেদন নিয়ে আমরা হাইকোর্টেও যেতে পারছি না। তাই আমরা চাই, এসব আসামিকে বিস্ফোরক মামলায় হয় জামিন দেওয়া হোক অথবা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক।
তবে আসামিপক্ষের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি ওই গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ ছিল। আদালত খোলার পর রাষ্ট্রপক্ষে আমরা নিয়মিত সাক্ষী হাজির করছি। অভিযোগপত্রে ১ হাজার ৩৪৫ জন সাক্ষী আছেন। সবার সাক্ষী নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। যারা সাক্ষ্য দিতে আসবেন তাদের জবানবন্দি নিয়েই বিচার শেষ করা হবে। আশা করছি এ বছরের মধ্যেই মামলার বিচারকাজ শেষ হবে।