ডিবি প্রধান হারুনসহ ১০ পুলিশের নামে বিএনপির মামলার আবেদন খারিজ

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির অফিসে ভাঙচুরের ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদসহ ১০ জনের নামে বিএনপির মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

গতকাল রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে সকালে একই আদালতে মামলার আবেদন করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান।

এরপর আদালত মামলার আবেদন খারিজ করে দেন। বিএনপির আইনজীবী হান্নান ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

মামলায় আরো যে ৯ জনকে আসামির আবেদন হয় তারা হলেন-কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান, ডিবি পুলিশ দক্ষিণের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায়, রমনার যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার দাস, ঢাকা মহানগরের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মেহেদী হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স এন্ড প্রকিউরমেন্ট) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার, উপ-পুলিশ কমিশনার (মতিঝিল) হায়াতুল ইসলাম খান, ডিএমপির মতিঝিল জোনের এসি গোলাম রুহানি ও আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের জার্সি পরিহিত অবস্থায় অস্ত্রহাতে প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণকারী আল আমিন ওরফে মাহিদুর রহমান।

মামলার আবেদনে বলা হয়, গত ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় হারুন অর রশিদ অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ঢাকা, মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা প্রধান তার সঙ্গে ১০/১২ জন বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে নিচতলার তালা ভেঙে এবং পাশে স্বচ্ছ কাঁচ দিয়ে আচ্ছাদিত স্বাধীনতার ঘোষক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ম্যুরালের গ্লাস ভেঙে ফেলে এবং ম্যুরালটির বাম চোখের অংশ লোহার সাবল দিয়ে আঘাত করে চোখে পরিহিত কালো সান গ্লাসটি ভেঙে ফেলে।

উল্লেখ্য, গত ৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ দিন রাত থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও নাইটিঙ্গেল থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। পরে পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালায়।

অভিযান চালিয়ে দলটির কয়েক শ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। কার্যালয় থেকে ককটেল উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ। চারদিন পর্যন্ত বিএনপি কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। চারদিন পর কার্যালয় খুলে দেয় পুলিশ।

কার্যালয় খোলার পর আইনজীবীদের সঙ্গে কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সাংগঠনিক ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স অভিযোগ করেন, পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে যা ঘটিয়েছে তা একাত্তরের পাক হানাদারদের কর্মকাণ্ডকেও হার মানায়।

তিনি জানান, পুলিশ বাহিনী কার্যালয়ে প্রবেশ করেই শহীদ জিয়াউর রহমানের ম্যুরালের কাচ ভাংচুরের মাধ্যমে তাণ্ডব শুরু করে। এর পর তারা প্রতিটি কক্ষে ভাঙচুর চালায়। তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অন্যান্য নেতার কক্ষের দরজা-জানালার গ্লাস, আসবাব ভাঙচুর করে। তারা ভবনের প্রতি তলায় অবস্থিত রুমে ভাঙচুর করে। তারা কম্পিউটার ভাঙচুর করে সেগুলোর হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়।

বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সেদিন সাদা ব্যাগে করে নিজেরাই ককটেল নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে গেছেন। পরে তারা ককটেল উদ্ধারের নাটক সাজিয়েছেন, যা গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়েছে।

বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানে ৫০ লাখ টাকা সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।