বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মোঃ সেলিম ও বিচারপতি মোঃ রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিএনপির এই শীর্ষ দুই নেতাকে ছয় মাসের জামিন দেন। একই সাথে তাদের কেন স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের রুলে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জামিন আদেশের পর বিএনপি নেতাদের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন বলেন, হাইকোর্ট বিএনপি\’র দুই নেতাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আদেশ দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকায় জামিনে মুক্তির বাধা নাই। আদালতে বিএনপির দুই নেতার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সাথে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, মোহাম্মদ আলী, মোঃ সগীর হোসেন লিওন, মোঃ আক্তারুজ্জামান, শহিদুল ইসলাম সপু, সাইফুল ইসলাম, আনিছুর রহমান খান, সালমা সুলতানা, মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনির ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম গোলাম মোস্তফা।
গতকাল সোমবার তাদের জামিন আবেদন করা হয়। নিম্ন আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় ১১ দিন পর রোববার আদেশের কপি পান তাদের আইনজীবীরা। এর পর সোমবার উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা।
নিম্ন আদালতে জামিন নামঞ্জুর হলেও উচ্চ আদালতের জামিন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তাদের আইনজীবীরা। জানান, হাইকোর্ট বিভাগের ৬৫ ডিএলআরের ৫৪১ পৃষ্ঠায় আছে মামলার এফআইআরে যাদের নাম আছে তাদের জামিন হলে যাদের নাম নেই তারা জামিন পাবেন।
এছাড়া সাংবাদিক শফিক রেহমানের মামলায় আপিল বিভাগের নির্দেশনা আছে যারা অসুস্থ এবং বয়স্ক তারা জামিন পেতে পারেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার এফআইআরে নাম না থাকা এবং দু\’জন বয়োজ্যেষ্ঠ, সমাজ ও রাষ্ট্রের গণ্যমান্য ব্যক্তি হওয়ায় মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের জামিন পেতে কোনো বাধা নেই বলে আইনজীবীরা মনে করেন।
মধ্যরাতে বিএনপির শীর্ষ এই দুই নেতাকে নিজ নিজ বাসভবন থেকে তুলে নেয়ার পর প্রায় তিন সপ্তাহ পার হলেও জামিন পাননি।
সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। তবে আদালতের আদেশ না পাওয়ায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবীরা।
গত ৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে তাদের নিজ নিজ বাসভবন থেকে তুলে নেয়ার প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর ডিবির কার্যালয় থেকে ৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয়। গত ৭ ডিসেম্বর পল্টনে বিএনপি নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে চারবার জামিন না পাওয়া মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের হাইকোর্টে জামিন আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আসাদুজ্জামান তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং পরবর্তী শুনানির জন্য ২৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ১৫, ১২ ও ৯ ডিসেম্বর তিনটি আদালতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।
নয়াপল্টনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও উসকানি দেয়ার অভিযোগে পল্টন থানায় করা মামলায় গত ৮ ডিসেম্বর দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীসহ ৪৩৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
কারাগারে পাঠানো বিএনপি নেতাদের মধ্যে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ ৪৩৪ জন। তবে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্যাহ আমান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।