সন্তানদের নামে নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো স্বদেশে পালাতে চেয়েছিলেন। নতুন পাসপোর্টের তথ্য স্বামী ইমরান শরীফের কাছে গোপন রেখেই আদালতকে না জানিয়ে এরিকো দেশ ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। ওই পাসপোর্ট নিয়ে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২ টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের এসকিউ-৪৪৬ ফ্লাইটে এরিকো পালাতে চেয়েছিলেন। তবে তাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ আটকান।
গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ইমরান শরীফ দেশের এক গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে পালানোর সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন নাসরিন নাহার ও তার বয়ফ্রেন্ড নাজমুল। আর নেপথ্যে মূল হোতা ছিলেন গুলশান-২ এর বাসিন্দা জুবায়ের আহমেদ নামে একজন। যিনি তার দুই সন্তানকে আদালতের অনুমতি ছাড়াই তার বাড়িতে ২ দিন রেখেছিলেন। গত ২৪ নভেম্বর বাচ্চাদের ফেলে তার মা ভারতে চলে যান। তখন আদালতকে বিষয়টি অবগত করি। আদালতের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করি তার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে যে কোনও সময় পালিয়ে যেতে পারে।
তবে জুবায়ের আহমেদ ওই গণমাধ্যমকে বলেন, ইমরান শরীফ যা বলছেন তার কোনও সত্যতা নেই। তার স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি। তার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। ইমরান শরীফ মিথ্যা কথা বলে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছেন। এমন কোনও প্রমাণ পেলে আমার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এদিকে জাপানি নারী নাকানো এরিকো শুক্রবার রাতে বলেন, আদালত তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। তিন মাস পূর্ণ হওয়ায় তার দুই সন্তানকে জাপান নিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে তার স্বামী ইমরান শরীফ বলেন, আপিল বিভাগের বিচারকগণ বলেছেন, তিন মাসের মধ্যে পারিবারিক আদালতে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে। সমাধান না হওয়ায় মামলা চলমান রয়েছে। আদালতকে অবমাননা করে এবং আমার সঙ্গে প্রতারণা করে দুই সন্তানকে জাপান নিয়ে যেতে চাইছিলেন এরিকো।
ইমরান শরীফ জানান, শুক্রবার এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের তত্ত্বাবধায়নে বড় মেয়েকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। ছোট মেয়ে থাকেন বাবার বাসায়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার দিকে তাদের বারিধারা-৮ নম্বর রোডের হোটেলে বসার কথা ছিল। প্রায় আধাঘণ্টা অপেক্ষার পরও এরিকো তার সন্তানকে নিয়ে আসেননি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার জাপান দূতাবাস থেকে তাকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান না করা হলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিবেন। তিনি বলেন, আমরাও আগামী ২৭ ডিসেম্বর চেম্বার আদালতে মামলা করবো।
দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকার নাগরিক। তিনি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। ২০০৮ সালে জাপানে এরিকোর সঙ্গে বিয়ে করেন তিনি। জাপানের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিয়ের পর টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ঘরে তিন কন্যা সন্তান। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি হয় তাদের। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ইমরান জাপান থেকে দেশে আসেন। এরপর মেয়েদের ফিরে পেতে একই বছরের ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন এরিকো। তাদের ফিরে পেতে ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে শিশু দুটিকে তেজগাঁওয়ে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয় কিছুদিন। সব পক্ষের শুনানি নিয়ে ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট গুলশানের ফ্ল্যাটে মায়ের হেফাজতে শিশুদের রাখার আদেশ দেন।
সংবাদ সূত্রঃ সময়ের আলো