ঘটনার প্রায় ১৮ মাস পর কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে রায়ের সময় ধার্য করেন। যদিও মাত্র ২৯ কর্মদিবসে আদালত আলোচিত এ মামলাটির বিচারকার্য সম্পন্ন করেছেন। এতে সিনহার পরিবার আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়েছে।
মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস জানান, সোমবার সকালে তারা উত্তরার বাসা থেকে কক্সবাজার এসেছেন। মামলার রায়ে আসামিদের কি সাজা হয় তা সরাসরি শুনবেন।
এর আগে, সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস আসামিদের ফাঁসির প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘আমার ভাইকে যারা গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের সবাইকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হোক। আমার মতো আর কোনও বোনের বুক যেন খালি না হয়। অপরাধ করে কেউ যেন পার না পায়।’
তিনি বলেন, ‘মামলার আসামি ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত। আমরা প্রত্যাশা করছি, এই দু’জনের সর্বোচ্চ সাজা হবে। বাকি আসামিদের যেন অপরাধ অনুযায়ী সাজা দেওয়া হয়। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এটাই যেন রায়ে প্রমাণ হয়।’
এই রায়ের মাধ্যমে দেশে ক্রসফায়ার বন্ধ হবে জানিয়ে শারমিন শাহরিয়া বলেন, ‘আমি মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে। অপরাধীরা সতর্ক হবে। মানুষ সুবিচার পাওয়ার আশা রাখবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে।’
রায় নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদীপক্ষ বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে। আর আসামিপক্ষের আইনজীবী বলছেন, ঘটনাটি প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষ। যদি আশানুরূপ ফলাফল না আসে তাহলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানান তারা। এর আগে, রায় শুনতে সকালেই আদালত চত্বরে এসেছেন আসামিদের স্বজনরা।
অন্যদিকে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ‘টেকনাফের সর্বস্তরের জনসাধারণ’ এর ব্যানারে ওসি প্রদীপের ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে তারা অভিযোগ করেন, প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থাকাকালে নিরীহ লোকজনকে হয়রানি ও নির্যাতন করেছেন। ক্রসফায়ার দিয়ে ১৪৫ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছেন। তাই তাদের দাবি, আজকে মামলার রায়ে প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসি হোক।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ৬ দিন পর ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন। মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত করার পর আদালত র্যাবকে তদন্তভার দেয়।
র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন। তারপর ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দেন। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।
সবশেষে ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলায় দু\’পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত আজ ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
মামলার ১৫ আসামি মধ্যে ১২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এদের মধ্যে পুলিশের ৯ জন ও এপিবিএনের ৩ জন। আর অপর ৩ জন পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী ও স্থানীয় বাসিন্দা।