‘মুনিয়ার লেখা ছয়টি ডায়েরি মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী’

গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহানের মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ওই ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার হাতে লেখা ছয়টি ডায়েরি উদ্ধার করে। গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন ওই ডায়েরিগুলো আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। গতকাল বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

পুলিশ উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, \”মোসারাত জাহানের নিজ হাতে লেখা ছয়টি ডায়েরি আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। পুলিশ ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দেওয়ার চেষ্টা করছে। মামলাটিকে আদালতে প্রতিষ্ঠিত করতে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।\”

পুলিশ উপকমিশনার সুদীপ কুমার আরো বলেন, \”মামলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হবে ডায়েরিগুলো। গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ ছয়টি ডায়েরি উদ্ধার করেছে। এই মুহূর্তে পুলিশ সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। মামলা হয়েছে দণ্ডবিধি ৩০৬ ধারায়। আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনা’ ও ‘অভিপ্রায়’ এখন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্য সাক্ষ্য সংগ্রহ জরুরি। পুলিশ এই ঘটনায় যাবতীয় তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। বেশ কিছু ‘ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট’ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ঘটনাটিকে এক সুতোয় গাঁথতে, অর্থাৎ কোন ঘটনার পর কোনটি ঘটেছে, তা জানতে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ, মুঠোফোন ও পারিপার্শ্বিক যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো সংগ্রহ করেছে।\”

পুলিশ উপকমিশনার জানান, \”ভুক্তভোগী নারীর মৃত্যু কী কারণে, সেটি জানা সবচেয়ে জরুরি।\” আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় আসামি গ্রেফতারে সাক্ষ্যপ্রমাণ আগে সংগ্রহের কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কি না- এ ব্যাপারে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, \”প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী যেকোনো মামলায় আসামি ধরায় কোনো বাধা নেই। আত্মহত্যার অভিপ্রায় এবং প্ররোচনাকে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে আদালতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মামলার অভিযোগের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ এবং সাক্ষ্য সংগ্রহ করা ও একসঙ্গে নিয়ে আসা জরুরি। আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আগে পুলিশ এই কাজগুলো আগে করতে চায়।\”

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, \”যেহেতু মামলাটি বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা, ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দিতে সবাই মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং মূলত আইনের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবাই কাজ করব।’ সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আরও জানান, সুরতহাল ও ময়নাতদন্তে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের প্রাথমিক ধারণা, মোসারাত আত্মহত্যা করেছেন। শরীরের অন্য কোথাও জখম বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ঝুলে থাকায় হাত-পা নীল হয়ে গিয়েছিল এবং কিছুটা ফুলে ছিল।\”

গুলশানের যে ফ্ল্যাটে মোসারাত জাহান মুনিয়া থাকত সায়েম সোবহান আনভীর সেখানে যাতায়াত করতেন। ভবনটি থেকে উদ্ধার করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে উপ-কমিশনার সুদীপ চন্দ্র চক্রবর্তী এ কথা জানান। সুদীপ চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, \”ওই ফ্ল্যাটে তার (আনভীর) যাতায়াত ছিল, সে ব্যাপারে সংগৃহীত ফুটেজে প্রমাণ মিলেছে। তবে ঘটনার দিন তার যাওয়ার কোনো প্রমাণ ফুটেজে পাওয়া যায়নি।\”

গত সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাটে থেকে পুলিশ কলেজছাত্রী মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে। মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া এ ঘটনায় বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুনিয়ার ময়নাতদন্তের পর গত মঙ্গলবার লাশ কুমিল্লায় নিয়ে স্বজনরা দাফন করেছেন। ওই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা মুনিয়ার ডায়েরি নিয়ে তদন্ত এগিয়ে চলছে জানিয়ে বুধবার উপকমিশনার সুদীপ চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, \”ডায়েরিতে আনভীরের সঙ্গে সম্পর্ক, মনোমালিন্য, জীবন সম্পর্কে হতাশার কথা লেখা রয়েছে। আরও বেশ কিছু কথা লেখা রয়েছে তা যাচাই করা হচ্ছে।\”

Scroll to Top