চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সহিংসতার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির আমির ও বর্তমান আহ্বায়ক জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে। হাটহাজারী থানায় গত বৃহস্পতিবার এ মামলা হলেও তা জানা গেছে গতকাল সোমবার।
জানা গেছে, এ দুটিমামলাসহ ওই ঘটনায় হওয়া মোট তিনটি মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ১৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় আরো তিন হাজার জনকে। অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন উপজেলা জামায়াতের আমির, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন।
গত ২৬ মার্চের ঘটনায় দেরিতে মামলা দায়েরর বিষয়ে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম গতকাল সোমবার বলেন, \”জড়িত আসামিদের শনাক্ত, নাম-ঠিকানা যাচাই করতে সময় লেগেছে। নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, তাই যাচাই করে প্রকৃত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। এখানে অন্য কিছু ছিল না।\”
চট্টগ্রাম পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) কনস্টেবল মো. সোলায়মান সহিংসতার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজত নেতা মীর ইদ্রিস, নাছির উদ্দিন, জাকারিয়া নোমান, আহসান উল্লাহসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতপরিচয় রাখা হয় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে।
হাটহাজারী জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সামনে থেকে ২৬ মার্চ দায়িত্ব পালনকালে মো. সোলায়মানকে ধরে নিয়ে মাদ্রাসায় আটকে রাখা হয়। তাকে সেখানে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় বলে তার (মো. সোলায়মান) দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়।
এ ছাড়া হাটহাজারী থানার পরিদর্শক আমির হোসেন আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজত নেতা জাকারিয়া নোমানসহ উপজেলা জামায়াতের আমিরসহ ৭৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এ দুটি মামলা ছাড়াও হাটহাজারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি সৈয়দ ইকবাল, উপজেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমরান শিকদারসহ ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে।
এই মামলার এজাহারে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে হাটহাজারী সদর, ইছাপুর বাজারে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও রাস্তায় দেয়াল দিয়ে আসামিরা অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আসামিরা ২৬ থেকে ২৮ মার্চ রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ, থানা ও ভূমি অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগসহ পুলিশের ওপর হামলা করেন।
হেফাজতে ইসলামের আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন বলেন, ‘কিছু বলার নেই। যা করার আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে হাটহাজারীতে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা থানায় হামলা চালালে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। পরে চারজন নিহত হন।
এ ঘটনার জেরে ছাত্ররা হাটহাজারী ও পটিয়া থানা ভবন, হাটহাজারী ডাকবাংলো, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সদর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে হামলা চালায়। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হাটহাজারী থানায় সাতটি, পটিয়া থানায় একটিসহ আটটি মামলা হয় ঘটনার চার দিন পর। আর এসব ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ৪ হাজার ৩০০ জনকে।