নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে কারা, কীভাবে আইনটির বাস্তবায়ন করছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
এদিকে গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ নতুন আইনে মামলা করেনি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেনি। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার আইনি প্রক্রিয়া শেষে গতকাল গেজেট হয়েছে। ফলে আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালত আজ থেকে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মাসুদ আহমেদ।
গতকাল সকালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আইনের বাস্তবায়ন দুই সপ্তাহ আমরা একটু শিথিল করেছিলাম। অনেকে হয়তো জানে না, কোন অপরাধ, কোন বিশৃঙ্খলার জন্য কী শাস্তিটা পেতে হবে। তার জন্য আমি দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছি। এখন আজ (রোববার) থেকে আমাদের এই আইন কার্যকর হবে।’
১ নভেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করে সরকার। তবে নতুন আইনে মামলা ও শাস্তি দেওয়ার কার্যক্রম মৌখিকভাবে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেন সড়কমন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, নতুন সড়ক আইনে ১৪টি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে আইনে থাকা বিভিন্ন বিষয়ের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এর পরের অধ্যায়গুলোতে যানবাহন ও চালকের যাবতীয় দলিল সংগ্রহ এবং করণীয় সম্পর্কে বলা আছে। এরপর বিআরটিএসহ পরিবহনসংশ্লিষ্ট সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া কী করলে আইন অমান্য হয়, তার বর্ণনা আছে। আর শেষের দিকে আইন অমান্যের দায়ে কী শাস্তি হবে, সেটার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। যানবাহন, চালক ও প্রতিষ্ঠানসম্পর্কিত অধ্যায়গুলোতে আগের আইনের চেয়ে খুব বেশি পার্থক্য নেই। ফলে যানবাহনের নিবন্ধন প্রদান, ফিটনেস সনদ হালনাগাদ, চালকের লাইসেন্স প্রদানসহ দৈনন্দিন কাজ নতুন আইন ও পুরোনো বিধিমালার আলোকে চলছে।
ট্রাফিক পুলিশের মামলা না দেওয়ার বিষয়ে সড়কমন্ত্রী বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের বৈঠক হবে ২৪ নভেম্বর। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেবেন। শুরুতে আইন প্রয়োগে কিছুটা শিথিলতা দেখানো হবে, এমন ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশনা দেবেন যাতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয়। প্রথমবারই বড় জরিমানা হয়ে যাবে, তা নয়। এমনও হতে পারে, অপরাধ কম হলে জরিমানাটা এক হাজার টাকা হবে। আবার এটা বারবার করলে সেখানে জরিমানাটা বাড়বে।
কারা কীভাবে আইন বাস্তবায়ন করছে, স্পষ্ট করা হয়নি।রোববার পর্যন্ত নতুন আইনে মামলা দেওয়া শুরু করেনি পুলিশ।ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার গেজেট হয়েছে।আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালত আজ থেকে কাজ করবেন।সড়ক আইন সংশোধনের দাবি।পুলিশ মামলা দেয়নি। গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ট্রাফিক পুলিশকে আইন অমান্যের দায়ে যানবাহন বা চালকের বিরুদ্ধে মামলা দিতে দেখা যায়নি। মোড়ে মোড়ে আইন সম্পর্কে মাইকে প্রচারের পাশাপাশি প্রচারপত্রও বিলি করেছে পুলিশ।ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজউদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিআরটিএর সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে দিনক্ষণ ঠিক করে আইনের প্রয়োগ শুরু হবে।
গতকাল বেলা পৌনে একটার দিকে রাজউক অ্যাভিনিউ ক্রসিংয়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মুশফিকুর রহমান বলেন, ওপর থেকে নির্দেশনা না পাওয়ায় তাঁরা নতুন আইন প্রয়োগ করতে পারছেন না। এখন প্রচার চালানো হচ্ছে। বেলা দুইটার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে কিছু মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে চলতে দেখা যায়। সেখানে ট্রাফিক সার্জেন্ট আবু সাঈদ বলেন, মামলা দেওয়ার যন্ত্রের সফটওয়্যার হালনাগাদ হয়নি। আর স্লিপের বই না থাকায় হাতে লিখে মামলা দেওয়া যাচ্ছে না।
সড়কে দুর্ঘটনা মামলায় চালকের শাস্তি কমানো ও মামলা জামিনযোগ্য করাসহ নানা দাবিতে গতকাল যশোরের নয়টি রুটে যাত্রীবাহী পরিবহনের চালকেরা হঠাৎ কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও তাঁরা কাজে যোগ দেননি। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। যশোরে ধর্মঘটের কারণে যশোর-নড়াইল, যশোর-খুলনা, যশোর-কেশবপুর, যশোর-চৌগাছা, যশোর-নাভারন-সাতক্ষীরা, যশোর-রাজগঞ্জ, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-মাগুরাসহ স্থানীয় বিভিন্ন সড়কে বাস চলাচল বন্ধ থাকে।
সড়ক আইন সংশোধনের দাবি নড়াইল প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন শেষে অঘোষিতভাবে জেলার আটটি রুটে যান চলাচল বন্ধ করে দেন স্থানীয় শ্রমিকেরা। এর আগে গত শনিবার বগুড়া ও কুষ্টিয়ায় পূর্বঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা।