ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ) কপি হাইকোর্টের আপিল বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
লাল কাপড়ে মুড়িয়ে আজ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারেকের আদালত থেকে তা হাইকোর্টে পাঠানো হয় দুই হাজার ৩২৭ পৃষ্ঠার কপিটি।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের অফিস সহকারী শামসুদ্দিন জানান, চাঞ্চল্যকর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপিটি দুপুর দেড়টার দিকে ফেনীর আদালত থেকে হাইকোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ফেনী জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর ও মামলার সরকারপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহমেদ বলেন, \’আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য মামলার নথি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক ডেথ রেফারেন্স আকারে পাঠানোর হয়েছে হাইকোর্টে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, ৩৭৪ ধারায় বলা হয়েছে দায়রা আদালত যখন মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন, তখন হাইকোর্ট বিভাগের কাছে কার্যক্রম পেশ করতে হবে এবং হাইকোর্ট বিভাগ অনুমোদন না করা পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা হবে না। তিনি বলেন, \’খবরে পড়েছি, নুসরাত হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স প্রস্তুত হলে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়ে দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। মামলা নিষ্পত্তিতে যাতে কম সময় লাগে, সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আমি কথা বলবো। তাঁর এমন উদ্যোগী ভূমিকায় মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবীরা আশাবাদী।\’
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে তার মায়ের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাতকে কৌশলে মাদরাসার প্রশাসনিক ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ৮ এপ্রিল নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো চারজনকে আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মাদরাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপর মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। আসামি করা হয় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজকে।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় আসামিদের। অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১২ আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, অধ্যক্ষের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে তাকে হত্যা করেছেন।
তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ১৬ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে গত ২৮ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। গত ২৪ অক্টোবর মামলার রায়ে ১৬ আসামির প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।