আবারও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরপিতা হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক।
আজ সোমবার দিনভর ভোটের পর সন্ধ্যায় গণনা শেষে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। মোট ২৮৯ কেন্দ্রের ফলাফলে বেসরকারি ফলাফলে নৌকার প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার প্রার্থী আবদুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট।
ভোটের ফল ঘোষণার আগেই তা প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী আন্দোলন। একইসঙ্গে সিলেটেও ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
খুলনা সিটি করপোরশনে এদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। সিটি করপোরেশনটিতে সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হয়। বড় ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরেছেন। ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা), স্বতন্ত্রপ্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান (দেয়াল ঘড়ি) ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল)।
খুলনায় ৩১টি ওয়ার্ডের ২৮৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৭৩২টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সিটি করপোরেশনটিতে মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক নির্বাচনে মেয়র পদে জয়লাভ করেছিলেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে পরাজিত করে খুলনার মেয়র হয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালের মে মাসে কেসিসি নির্বাচন হয়েছিল দলীয় প্রতীকে। তখন মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন পাঁচ জন, তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন।
১৯৫২ সালের ১ জুন বাগেরহাটের মল্লিকের বেড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তালুকদার আবদুল খালেক। তার স্কুলজীবন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক জীবনের প্রায় পুরোটাই কেটেছে খুলনায়। ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৭৭ সালে খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ওই বছরই ২১ বছর বয়সে খুলনা পৌরসভার মহসিনাবাদ ইউনিয়নের কমিশনার হন। এরপর মহসিনবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের খুলনা জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বাগেরহাট-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য হন। ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তার স্ত্রী হাবিবুন নাহার। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তালুকদার আবদুল খালেক।
২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও বাগেরহাট-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তালুকদার আবদুল খালেক।