আবারও চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু হাসাপাতালেও একই দশা। এ পরিস্থিতিতে জ্বর এলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন হতে বলছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত বছরের আগস্টে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৯৯ জন। আর চলতি বছরের আগস্টে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৩৬ জন। চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ১৫ হাজার মানুষ। এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০৭ জন।
গত ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ৭৫ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০৭ জনের। চলতি মাসের ১৫ দিনে মোট আক্রান্ত ৪৮৬ জন।
চিকিৎসকরা বলছেন, বরাবরের মতই ডেঙ্গুর লক্ষণ বুঝতে না পারার কারণেই বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকিও। প্লাটিলেট নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে বারবার রক্তচাপ পরীক্ষা ও পর্যাপ্ত পানীয় পানের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. মুহাম্মদ আল আমিন সময় সংবাদকে বলেন,
বাসায় শরীরে একটু হাত দিলেই বুঝতে পারবেন যে শরীরটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কিনা। বিশেষ করে প্রেসারটা মেপে দেখুন কমে যাচ্ছে কিনা। বিপদজনক উপসর্গ ১০টি। এই ১০টি উপসর্গের মধ্যে কেউ খেয়াল রাখলেই বুঝতে পারবেন, রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে কিনা। তখনই পরিস্থিতি বুঝে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমান বলেন, যে সিবিসি পরীক্ষা করে ডেঙ্গুর রিপোর্ট দেয়া হয়, সেখানে ৯৫ শতাংশই বিশেষজ্ঞ হেমাটোলোজিস্ট বা বিশেষজ্ঞ প্যাথলোজিস্ট দ্বারা ভেরিফায়েড হয় না। ফলে এখানে রোগীরা ভুল প্লাটিলেটের রিপোর্ট পায়। দেখা যায়, রোগীর প্লাটিলেট ২০ হাজার আছে। কিন্তু হেমাটোলোজিস্ট বা প্যাথলোজিস্ট দ্বারা ভেরিফায়েড হবে, তখন প্লাটিলেট আর ২০ হাজার থাকছে না। সেটা ৫০ হাজার বা এক লাখ হয়ে যাচ্ছে।
এডিস যেহেতু ঘরের মশা, তাই জনসচেতনতার বিকল্প নেই বলে মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, এডিস প্রতিরোধে জনমানুষের পাশাপাশি ভূমিকা রাখতে হবে স্থানীয় সরকার বিভাগকেও।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, প্লাটিলেটের সংখ্যাটাই কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। শরীরের ভেতরে সেটি ফুসফুসে হোক বা পেটে হোক– পানি জমে যাওয়ার কারণে, যাকে আমরা প্লাজমা লিকেজ বলি, সেটিও কিন্তু মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে। একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করে কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
৬ থেকে ১৬ বছর বয়সি শিশুর জন্য জাপান ইতোমধ্যেই ‘কিউডেঙ্গা’ নামের একটি ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত। অনেকের মতে, অন্তত শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে এই ভ্যাকসিন আমদানি করতে পারে বাংলাদেশ।