প্রায় সময় শোনা যায় স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তানের বিভিন্ন সমস্যা হয়। এমনকি জীবনের ঝুঁকি অবধি হয়। তাই অনেকেই বিয়ের আগে রক্তের গ্রুপ জেনে নেন। সত্যি কি স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তানের স্বাস্থ্যের জটিলতা দেখা দিতে পারে এ নিয়ে বিশ্ব নানান গবেষণা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মারুফা খাতুন।
শুরুতেই তিনি রক্তের গ্রুপ নিয়ে বিস্তারিত জানান। ডা. মারুফা খাতুন জানান, বিভিন্ন অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে রক্তের গ্রুপ ভাগ করা হয়। এবিও গ্রুপিং পদ্ধতিতে চারটি রক্তের গ্রুপ আছে—এ, বি, এবি এবং ও। এই রক্তের গ্রুপগুলোর কোনোটি সাধারণত গর্ভের শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে না। তবে এবিও গ্রুপের অসামঞ্জস্যতার জন্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্ডিস হতে পারে। আরএইচ অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে রক্তের গ্রুপ হতে পারে পজিটিভ অথবা নেগেটিভ। এ ক্ষেত্রে যা ঘটতে পারে—
স্বামী-স্ত্রী দুজনের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ: গর্ভের সন্তানের রক্তের গ্রুপও পজিটিভ হয়। ফলে মায়ের সঙ্গে সন্তানের রক্তের গ্রুপের সামঞ্জস্য থাকে এবং দুজনই নিরাপদ থাকে।
স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ ও স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ: এক্ষেত্রে সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ বা নেগেটিভ যে কোনোটাই হতে পারে। তবে মায়ের রক্তের গ্রুপ যেহেতু পজিটিভ, সেহেতু দুজনের কারোরই ক্ষতির শঙ্কা নেই। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ: এ ক্ষেত্রে সন্তানের রক্তের গ্রুপও নেগেটিভ হয়। ফলে কোনো সমস্যা হয় না।
স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ কিন্তু স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ: এই ক্ষেত্রে দেখা যায় গর্ভের সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভও হতে পারে অথবা নেগেটিভও হতে পারে। যদি পজিটিভ হয়, সে ক্ষেত্রে সন্তানের শরীর থেকে কিছু পজিটিভ লোহিত রক্তকণিকা মায়ের শরীরে চলে আসে এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সাধারণত প্রথম বাচ্চার কোনো সমস্যা হয় না।
তবে পরবর্তী সময়ে মা যদি অন্তঃসত্ত্বা হন এবং গর্ভের সন্তান পজিটিভ রক্তের হয়, তাহলে এই অ্যান্টিবডি সন্তানের লোহিত রক্তকণিকাগুলোকে ধ্বংস করে। ফলে শিশুর শরীরে রক্তশূন্যতা ও জন্ডিস দেখা দেয়। রক্তশূন্যতার মাত্রা তীব্রতর হলে লিভার ও হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং শিশুর শরীরে পানি জমতে থাকে। তখন গর্ভস্থ শিশুর শরীর ফুলে যায়, যাকে বলে হাইড্রপস ফেটালিস। এ অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা না হলে শিশু পেটের মধ্যে মারা যেতে পারে। এ ঘটনা পরবর্তী সব পজিটিভ রক্তধারী শিশুর ক্ষেত্রেই ঘটতে থাকে। তবে সন্তান যদি নেগেটিভ গ্রুপের হয়, তাহলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।
রক্তের গ্রুপ এক হলে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কী
অন্তঃসত্ত্বা প্রত্যেক মায়ের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। সম্ভব হলে সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করার সময়ই করে নিন।
স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে মায়ের রক্তে আগেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, দেখার জন্য আরএইচ অ্যান্টিবডি নির্ণয় করতে হবে।
অন্তঃসত্ত্বা মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে অবশ্যই স্বামীর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে।
মায়ের শরীরে আরএইচ অ্যান্টিবডি অনুপস্থিত থাকলে ২৮ সপ্তাহে মাকে অ্যান্টিবডি টিকা দিতে হবে এবং সন্তানের জন্মের পর তার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় মাকে টিকা দিতে হবে।
যদি মায়ের শরীরে আগে থেকেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে আর টিকার কোনো ভূমিকা নেই। ওই মাকে অবশ্যই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অন্তঃসত্ত্বা হিসেবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে।