সুস্বাদু ফলের মধ্যে পাকা পেঁপের আকর্ষণ বেশি। কাঁচা সবজি বা পাকা ফল যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন, পেঁপে শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, পেঁপের সঙ্গে পেঁপের বীজও যে আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি পুষ্টি সরবরাহকারী, তা আমরা বেশির ভাগ মানুষই জানি না। আজ বরং পেঁপের বীজ নিয়েই কথা বলা যাক।
রোগ প্রতিরোধে পেঁপের বীজ
পেঁপের বীজে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী অতি প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, যার মধ্যে ‘পলিফেনলস’ ও ‘ফ্লাভোনয়েডস’ অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে শরীরকে সতেজ করে।
পেঁপের বীজে প্রচুর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। পেঁপের বীজে যে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, তার মধ্যে অলেয়িক অ্যাসিড অন্যতম। ১০ লাখ ডায়াবেটিস রোগীর ওপর তিন বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, পরিমিত পরিমাণ পেঁপের বীজ গ্রহণকারীদের ট্রাইগ্লিসারাইড ১৯ শতাংশ এবং লো–ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন ২২ শতাংশ কমে আসে। অলেয়িক অ্যাসিড আবার ওমেগা নাইন ফ্যাটি অ্যাসিড, যা উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমিয়ে আমাদের হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখে।
এ ছাড়া ছত্রাক বা অণুজীবের আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষায় পেঁপের বীজের অবদান অনেক। ক্যানসার প্রতিরোধক
ক্যানসার প্রতিরোধে পেঁপের বীজের পুষ্টিগুণকে ওপরের দিকে রাখা যায়, বিশেষত প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গবেষণা ডেটাবেজ পাবমেড সেন্ট্রালে পেঁপের বীজের গুণাগুণ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১১টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে এই বীজকে অ্যান্টিক্যানসার হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
কিডনির সুরক্ষায়
কিডনি আমাদের শরীরের বর্জ্য পদার্থ নিঃসরণে সাহায্য করে। পেঁপে বীজের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট গুণাগুণ শরীরের ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে কিডনির ওপর চাপ কমায়। এ ছাড়া নেফ্রোটক্সিক পদার্থকেও ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
পরিপাকক্রিয়া
পেঁপের বীজ আঁশে ভরপুর একটা খাবার। পেঁপের মতোই তা আমাদের খাবার হজমে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ত্বকের যত্নে
ত্বককে উজ্জ্বল করতে পাকা পেঁপের শুকনা বীজের গুঁড়া প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক হিসেবে এখন অনেক ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া পেঁপের বীজ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে এক দিন পরপর খেলে ব্রণ ও শুষ্ক ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পেঁপের বীজ খাওয়ার আগে যা জানা জরুরি
যাঁরা গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন বা অন্তঃসত্ত্বা, তাঁরা পেঁপের বীজ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবেন। কারণ, অতিরিক্ত পেঁপের বীজ গর্ভনিরোধক হিসেবে কাজ করে।
অতিরিক্ত পেঁপের বীজ গ্রহণ ছেলেদের ক্ষেত্রে বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুক্রাণু পুরোপুরি নষ্ট করে ফেলে।
পেঁপের বীজে বেনজাইল আইসোসায়ানাইড নামে একধরনের রাসায়নিক থাকে, যা ডিএনএ সিকুয়েন্সে পরিবর্তন আনতে পারে। অনেক সময় ক্ষতিও করতে পারে। এ জন্য অতিরিক্ত পেঁপের বীজ কোনোভাবেই খাওয়া ঠিক নয়।
কীভাবে খেতে হবে
পাকা পেঁপে খাওয়ার সময় বীজগুলো ফেলে না দিয়ে পাত্রে সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকনা বীজগুলো গুঁড়া করে বায়ুনিরোধক কাচের পাত্রে রাখতে হবে। অতিরিক্ত তেতো স্বাদের এই গুঁড়া যেকোনো সালাদ বা স্মুদি বানানোর সময় ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পুষ্টিগুণ পাওয়া যাবে আর তেতোও লাগবে না।
ডা. হিমেল বিশ্বাস, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা