সহজ উপায়ে গরু মোটা করার অসাধু পন্থা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের স্টেরয়েড যেমন—ওরাডেক্সন, ডেক্সামিথাসন, ডেকাসন, স্টেরন, প্রেডনিসোলন ট্যাবলেট, গুঁড়া পাউডার বা তরল খাবারের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। কোরবানির কাছাকাছি সময়ে এসে অনেক খামারি পশুর দেহে স্টেরয়েড ও হরমোনজাতীয় ইনজেকশন ব্যবহার করে থাকেন। এসব হরমোনের প্রভাবে অল্প সময়ে পশু মোটাতাজা হয়ে ওঠে সত্যি, কিন্তু পশুর শরীরে বাসা বাঁধে মারাত্মক জটিল সব রোগ। আর অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই পশুর কিডনি ও লিভারের কার্যকারিতা লোপ পায়।
উপরন্তু লিভার ও কিডনি বিকল হয়ে পড়ার কারণে এসব পশুর দেহে স্টেরয়েড ও হরমোন ডি-টক্সিফাই হয়ে নিঃসরণ হতে পারে না। এসব অনিঃসরিত হরমোন ও স্টেরয়েড গরুর মাংসসহ অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জমে থাকে। কোরবানির পর এসব পশুর মাংস মানবদেহের জন্যও স্বাস্থ্যহানিকর।
কী কী ক্ষতি হতে পারে
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পশু মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত এসব স্টেরয়েড কিডনি, লিভার, হার্ট, শরীরের মাংসপেশি এবং হাড়ের বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক রোগের জন্য দায়ী।
বাড়ন্ত বয়সের ছেলেমেয়েদের পেশি ও হাড়ের ভঙ্গুরতা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি হ্রাস, রক্ত জমাট বাঁধা কার্যক্রমে ব্যত্যয় ঘটায়। মস্তিষ্ক বৃদ্ধি হ্রাস, স্নায়ু বৈকল্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাঘাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
রান্নার পরও এসব গরুর মাংস থেকে এই উচ্চমাত্রার স্টেরয়েড মুক্ত হয় না বলে মানুষের কিডনি, লিভার, ফুসফুস এবং অন্যান্য অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের অল্প বয়সে রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি ও স্থূলতা দেখা দেয়।
মহিলাদের স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সারেও এটির ক্ষতিকারক প্রভাব বিদ্যমান।
সুস্থ পশু চিনবেন কিভাবে
কোরবানির পশু কেনার সময় সুস্থ পশু কেনায়ও সচেতন হতে হবে। পশু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ দেখে স্টেরয়েড বা হরমোন ব্যবহারে মোটাতাজা গবাদি পশু চেনা যায়।
* অতিশয় মোটাতাজা পশু একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে এবং সহজে নড়াচড়া করতে পারে না।
* এসব পশুর গায়ে খোঁচা দিলে অন্যান্য সাধারণ পশুর মতো সাড়া দিতে পারে না।
* এসব পশুর চামড়া অধিকতর চকচকে থাকে।
* চামড়ায় স্পর্শে এসব পশু স্বাভাবিক টের পায় না।
* শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেশি থাকে।
* নাকের উপরিভাগ অপেক্ষাকৃত শুষ্ক থাকে। তবে প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মোটাতাজাকৃত গরুর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। মাথা উঁচু, কান খাড়া, শরীর টানটান, তীক্ষ থাকবে। গরুগুলোর প্রাণোচ্ছল ও প্রাণচাঞ্চল্যপূর্ণ চটপটে ভাব থাকবে, দ্রুত হাঁটাচলা ও স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া করবে। ভারী আওয়াজে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকবে, এমনকি গুঁতা দিতেও উদ্যত হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন
লে. কর্নেল নাজমুল হুদা খান
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সাবেক সহকারী পরিচালক
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা