আমাদের কাছে প্রায় প্রতিদিনই মোবাইল ফোনে আসক্ত বাচ্চাদের নিয়ে পরামর্শের জন্য আসছেন তাদের মা-বাবারা। এসব বাচ্চা খাবার খায় না, পড়া মনে রাখতে পারে না, মেজাজ খিটখিটে থাকে, এমন অনেক সমস্যা। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমাদের ব্রেনের নির্দিষ্ট কিছু কাজ আছে, একে বিশ্রাম দিতে হবে। কিন্তু আমরা ব্রেনকে ভুল পথে পরিচালনা করছি।
এ কারণে বিশেষ করে বাচ্চারা অনেক বেশি সমস্যায় পড়ছে। তাদের যথাযথ বিকাশ হচ্ছে না। ঘুমানো, পড়ালেখা সব কিছুতে ব্যত্যয় ঘটছে। মূলত শিশুরা যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত মোবাইল দেখে, গেম খেলে, ভিডিও দেখে, তখন ডোপামিন নিঃসরণ হয়।
এতে মোবাইল ছাড়া কিছুই বোঝে না শিশুরা। যেটি মাদক গ্রহণের ক্ষেত্রেও ঘটে। অর্থাৎ মাদকে আসক্তি আর মোবাইল ফোনে আসক্তি প্রায় একই রকম, বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিকের শিশুরাও অ্যানড্রয়েড ফোন ব্যবহার করছে।
ইন্টারনেটের বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিচরণ ঘটছে। ইউটিউবসহ নানা জায়গায় তাদের যা দেখার কথা না, তারা সেটাও দেখছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শিশুদের শিশুতোষ প্রগ্রাম ছাড়া অন্য কিছু দেখানো উচিত নয়। শিশুরা নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ফোন দেখলেও সেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে হবে। সরকার প্রয়োজনে এসংক্রান্ত অ্যাপসের ব্যবস্থা করতে পারে।
শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকদের বড় ভূমিকা রয়েছে। শিশুর সামনে যদি মা-বাবাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ফোন দেখেন, তাহলে সেটা আরো বড় ক্ষতিকর। কারণ শিশুরা বড়দের অনুকরণ করে, তারা বড়দের দেখে শেখে।
আবার এমনটাও দেখা যায়, মা-বাবা অন্য কাজ করছেন, ওই সময়টায় তাঁরা শিশুর হাতে মোবাইল ফোন দিয়ে দিচ্ছেন। শিশু খাবার খাচ্ছে না, মা-বাবা মোবাইল দেখিয়ে খাওয়াচ্ছেন। এতে তাঁরা মনে করছেন, শিশু শান্ত আছে। কিন্তু শিশুরা সাময়িকভাবে শান্ত থাকলেও এর পরিণতি ভয়াবহ।
বলা চলে অভিভাবকরাই শিশুদের অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। যেটা কোনো অবস্থাতেই করা উচিত নয়। মোবাইলে যদি শিশুদের কোনো কিছুর প্রয়োজন পড়ে, তাহলে একটা লিমিট দিয়ে দিতে হবে। সন্ধ্যার পর কোনোভাবেই শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দেওয়া যাবে না।