৯ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা দুই লাখ ছাড়াল

সংগৃহীত ছবি

অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে এবার ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। মৌসুমের শুরু থেকেই ডেঙ্গুতে মৃত্যুর শুরু। আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে প্রতিনিয়ত। গত তিন মাসে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ৭৯৩ জনকে নিয়ে দেশে গত ৯ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়েছে। তার মধ্যে ৯৫ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও মারা গেছে প্রায় পৌনে ১ হাজার।

এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ। ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ নারী। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৮ হাজার ৫৫৭ এবং ঢাকার বাইরে ১ লাখ ১১ হাজার ৯২৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ৯৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় মারা গেছেন ৬৩১ আর অন্যান্য জেলায় আরও ৩৪৪ জন।

২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর গত বছর ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে ভর্তি হয় ৬২ হাজার ৩৩৫ জন। হাসপাতালে ভর্তি রোগী সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৯ সালে। সে বছর মোট রোগী ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। মৃত্যু ১৭৯ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন দুই হাজার ৭৩২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মারা গেছে প্রতিদিন ১৩ জনের বেশি। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের কারণে মাল্টিপল অর্গান ফেইলিওর হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭৩ শতাংশ রোগীর। হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে মৃত্যু ৮৭ শতাংশের। এর মধ্যে ৬৩ শতাংশের মৃত্যু ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১৯ হাজার ১২৯ জন রোগীর মধ্যে পাঁচ হাজার ১৮২ জন বা ২৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরের। এরপর চার হাজার ১৭২ জন বা ২১.৮০ শতাংশ ঢাকা মহানগরের বাইরে, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। চট্টগ্রাম বিভাগে দুই হাজার ৯৮১ জন বা ১৫.৫৮ শতাংশ, বরিশালে দুই হাজার ৭৪৩ জন বা ১৪.৩৩ শতাংশ ও খুলনায় দুই হাজার ১৭৭ জন বা ১১.৩৮ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মশা কমানোর জন্য এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা আমরা নিতে পারছি না। এর সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টি তো নিয়মিতই হচ্ছে। ভারি বৃষ্টি হলে কয়েক দিনের জন্য মশা কমে আবার বেড়ে যায়। বলা যায়, বৃষ্টি কমে যাওয়ার চার সপ্তাহ পর্যন্ত মশা বাড়তে থাকবে, এরপর হয়তো কমবে। বৃষ্টি অক্টোবর পর্যন্ত থাকবে বলা হচ্ছে। সুতরাং ডেঙ্গু রোগী কমার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৮২ হাজার ৪৭১ জন ঢাকার মহানগর ও এক লাখ ১৮ হাজার ৫১০ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকার মহানগরে ৬৩১ জন ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৩৪৪ জন।