মধ্যবয়সে ব্রণ কী ও কেন? কী এর চিকিৎসা?

সংগৃহীত ছবি

 

ব্রণ কি ?

ব্রণ হলো মানব ত্বকের একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগবিশেষ যা বিশেষত লালচে ত্বক, প্যাপ্যুল, নডিউল, পিম্পল, তৈলাক্ত ত্বক, ক্ষতচিহ্ন বা কাটা দাগ ইত্যাদি দেখে চিহ্নিত করা যায়। এটি নিয়ে সবাই ভাবেন অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের বা টিনএজের রোগ ।তবে বাস্তবে অনেক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে ত্বকের এ সমস্যাটি টিনএজের নয় বরং শুরুই হচ্ছে টিনএজের পর থেকে। এমনকি মধ্য বয়সে এসেও এ সমস্যাটি নিয়ে অনেকেই ভুগছেন।

আমাদের ত্বকের নিচে সিবাসিয়াস গ্রন্থি নামক এক ধরনের তৈলগ্রন্থি থাকে যেগুলো আমাদের ত্বককে মসৃণ ও নরম রাখতে এক ধরনের তৈল (সিবাম) উৎপন্ন করে। আপনার যদি পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) থাকে বা হরমোনজনিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করেন তবে আপনার প্রাপ্তবয়স্কদের ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। স্ট্রেস হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ব্রণতেও অবদান রাখতে পারে।
কারণ ব্রণ শুরুই হয় শুধু মানসিক দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের কারণে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এরকমটা ঘটে মধ্যবয়সের পর।

কি কি কারণে হয়?

একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে মসলাদার তৈলাক্ত খাবার, চকলেট বা ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বেশি খেলে ব্রণ হতে পারে। কিন্তু এ ধারণার তেমন কোন নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মূলত যেসব বিষয়গুলো ব্রণের জন্য দায়ী সেগুলো হচ্ছে,

১/বয়ঃসন্ধি বা গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের হরমোনজনিত পরিবর্তন

২/কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ঔষধ সেবন, যেমন স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ বা জন্মনিয়ন্ত্রক ঔষধ সেবন,

৩/ অতিরিক্ত পরিমাণে শর্করা বা প্রক্রিয়াজাত চিনিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ,

৪/ জীনগত কারণ

বয়ঃসন্ধিতে উপনীত কিশোর-কিশোরীরাই সবচেয়ে বেশি ব্রণের সমস্যায় ভুগে থাকে। কারণ এ সময়ে তাদের শরীরে বেশ বড় কিছু হরমোনজনিত পরিবর্তন ঘটে থাকে। এই পরিবর্তনের কারণে তাদের দেহে তৈল উৎপাদনের মাত্রা বেড়ে যায় যেটি ব্রণ সমস্যার অন্যতম মূল কারণ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হরমোনজনিত এ ব্রণের সমস্যাও আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যায় বা অনেকটাই কমে যায়।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী ত্বকের যত্নে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে একনি বা ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

দিনে দুই-তিনবার মুখ পরিষ্কার করতে হবে ক্ষারবিহীন সাবান বা ফেইসওয়াশ দিয়ে। কারও মুখে যদি অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার সমস্যা থাকে তাহলে মুখ ঘামার সাথে সাথে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে, কারণ অতিরিক্ত ঘাম ব্রণের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

মুখ ধোয়ার সময় কোন স্পঞ্জ, রূক্ষ কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে ঘষে মুখ পরিষ্কার না করাই ভালো। মুখে সাবান বা ফেইসওয়াশ লাগানোর জন্য হাত ব্যবহার করাই উত্তম।

ত্বকের উপযোগী নয় এমন কোন প্রসাধনী বা পণ্য ব্যবহার করা উচিত নয়। একেকজনের ত্বকের ধরণ একেক রকম হয়। তাই ত্বকের ধরন বুঝেই ব্যবহার্য পণ্য বা প্রসাধনী নির্বাচন করা উচিত।

খুব বেশি পরিমাণ স্ক্রাবিং বা ঘষামাজা ত্বকে ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ত্বকে অতিরিক্ত স্ক্রাবিং করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
হালকা গরম পানিতে ত্বক পরিষ্কার করা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী।

কারও যদি তৈলাক্ত চুল হয়, তবে তাদের নিয়মিত শ্যাম্পু করা উচিত। চুল খুশকিমুক্ত রাখার চেষ্টা করা উচিত। অনেকে ভাবতে পারেন তৈলাক্ত চুল বা মাথার ত্বকের সাথে মুখের কি সম্পর্ক! আসলেই এগুলোর সম্পর্ক আছে এবং একটি অন্যটিকে বেশ ভালোভাবেই প্রভাবিত করে। মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলে তা মুখের ত্বককেও তৈলাক্ত করে তোলে। আর অতিরিক্ত তেল ব্রণের সমস্যাকে বাড়ানোর জন্য দায়ী।

মুখে ব্রণ হলে সেগুলোকে বারবার ধরা, খুঁটা বা গালিয়ে ফেলার বদঅভ্যাস আমাদের বেশিরভাগের মধ্যেই আছে। কিন্তু এ কাজটি করা মোটেও ঠিক নয়। কারণ তাতে হাতের সংস্পর্শে আক্রান্ত স্থানে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং এটি আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে সমস্যা কমার পরিবর্তে আরও বেড়ে যায় এবং ব্রণ ভালো হলেও সেই জায়গায় দীর্ঘস্থায়ীভাবে কালো দাগ হয়ে যেতে পারে।
সরাসরি সূর্যরশ্মি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা উচিত। রোদে বের হওয়ার আগে অবশ্যই ত্বকে সানস্ক্রিম লাগিয়ে নেয়া জরুরি।

কেউ যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদেরও প্রকটভাবে ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। বেশি বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার, শাক-সবজি, ফল-মূল ও পরিমিত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

মানসিক চাপ, ক্রোধ ইত্যাদি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা উচিত। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক চাপের কারণে ব্রণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
ব্রণের পরিমাণ বা তীব্রতা বেশি হয়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং পরামর্শমত সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। অনেকে এটিকে কোন রোগ বলেই মনে করেন না, তাই গুরুত্বও দেননা। অথচ সঠিক চিকিৎসা না করলে ব্রণের সমস্যাও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ত্বকে গভীর প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার কারণে দীর্ঘস্থায়ী কালোদাগ হয়ে যেতে পারে। যদিও এটি কোন জীবনঘাতী রোগ এমন নয়, তবুও এর কারণে অনেক সময় চেহারা খারাপ দেখায়, ফলে অনেকেই হতাশায় ভুগতে শুরু করেন।

সাধারণ ধারণা মতে একনি বা ব্রণ শুধুমাত্র মুখে হয়। অথচ এটি মুখ, ঘাড়, গলা, বুক, পিঠ, কাঁধ বা হাতেও হতে পারে। আমরা সবাই জানি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। কিন্তু ব্রণের সমস্যা প্রতিরোধ করা খুব কঠিন। তাই এর প্রতিকারে সচেতনতাই হলো মূল উপায়। উপরোল্লিখিত সতর্কতাগুলো অবলম্বন করতে পারলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্রণের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

চিকিৎসা: 

মুখে ব্রণের জন্য দরকারি ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্রণ বেশি গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে গেলে মুখে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ারও প্রয়োজন পড়তে পারে। তবে এ ধরনের ব্রণে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার প্রচেষ্টা অব্যাহত না রাখলে যে ধরনের চিকিৎসাই করা হোক না কেন, ব্রণের পুনরাবির্ভাব ঘটা মোটেই বিচিত্র নয়।