ঢাকার বাইরেও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।

সংগৃহীত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও রাজধানীর পরিস্থিতি ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতিকে স্বস্তিদায়ক বলে মনে করেন না। তারা জোর দিয়ে বলে যে একটি অবস্থানকে রোগগতভাবে স্থিতিশীল হিসাবে বর্ণনা করা যায় না যদি সেখানে সংক্রমণের উচ্চ হার অব্যাহত থাকে। বেশি রোগী থাকলে ধরে নিতে হবে সংক্রমণ এখনও আছে।

আগস্ট থেকে নভেম্বর এই চার মাসে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থাকে বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ঢাকার একটি হাসপাতালে ১০০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ভর্তি হচ্ছে। প্রতিদিন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে প্রায় ৩০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে।

গত এক দিনে, ১২জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে, বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে।

হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২০৭১১ জন রোগী। এর মধ্যে ১,৫৮১ জন ঢাকার বাইরের।। আর ঢাকায় ১১৩০ জন ।
ঢাকায় সংক্রমণের হার অনেকাংশেই স্থিতিশীল।

২ই আগস্ট দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শাহাদাত হোসেনের মতে, “ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, তবে ঢাকার বাইরে আক্রান্তের হার বাড়ছে।

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৮৯ জন। এ হাসপাতালে রোগীর শয্যা রয়েছে ৬০০টি। “কিছু এলাকায় এখনও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে,” তিনি ঘোষণা করেন। যাত্রাবাড়ী, মুগদা, উত্তরা, জুরাইন ও মিরপুর কয়েকটি। যাত্রাবাড়ী এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি।

বিভাগীয় পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আক্রান্তের দিক থেকে ঢাকার পরেই চট্টগ্রামের অবস্থান।’

নিহত ১২ জনের সবাই ঢাকার বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে যে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই ঢাকাবাসী। এই বছর, মৃত্যু হয়েছে ২৭৩ জনের। নতুন ভর্তি দুই হাজার ৭১১ জনকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৭ হাজার ১২৭।

সেই বিন্দু পর্যন্ত সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল ২০২২ সালে। হাসপাতালে সর্বোচ্চ এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ভর্তি হয়েছিল ২০১৯ সালে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে যে, বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ৩২৫ জন রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় চার হাজার ৮৬৯ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় চার হাজার ৪৫৬ জন।

এখনো আশঙ্কার দিনগুলো রয়ে গেছে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন,‘এডিস মশার ঘনত্ব, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত—এই কয়েকটি বিষয়কে সিমুলেশন মডেলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে থাকি। সেখানে আমরা এখনো কোনো স্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখছি না। আমাদের কাছে মনে হয় এখনো আশঙ্কার দিনগুলো রয়ে গেছে।’

ঢাকায় প্রকৃত রোগীর সংখ্যা কেউ জানে না বলে দাবি করেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর পরিমাণ জানা যায়। আমাদের মতে, ঢাকার হাসপাতালগুলোর রোগীর সক্ষমতা বাড়েনি। তাই এটা স্থিতিশীল প্রদর্শিত হতে পারে.

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বি-নাজির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেক রোগী থাকলে এবং সংখ্যা স্থিতিশীল থাকলে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা রয়েছে। অন্য কথায়, আরও বেশি ঘটনা নির্দেশ করে যে অনেক ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রবণতা এখনও বিদ্যমান। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হলে নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘যদি সংক্রমণের উচ্চহার এক জায়গায় থাকে সেটাকে রোগত্ত্বাতিকভাবে স্থিতিশীল বলা যাবে না। বর্তমানে ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়। যদি কমে গিয়ে স্থিতিশীল থাকে সেটা স্থিতিশীল।’

তিনি ঘোষণা করেন যে চারটি মাস-আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর-ই ঝুঁকিপূর্ণ। যখন আমরা পরপর দুই সপ্তাহ ধরে হ্রাস লক্ষ্য করি তখন সংক্রমণ হ্রাস পেয়েছে বলে বলা হয়। তবে, সেই পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।

 

ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কম; যদি পাওয়া যায়, আমি নিয়ে আসব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, “ডেঙ্গুর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কম; যদি ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, আমরা অবশ্যই তা নিয়ে আসব এবং আমাদের জনগণকে দেওয়ার ব্যবস্থা করব,” বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

 

জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গুতে নারীরা বেশি প্রাণ হারায়। কর্মক্ষম বয়স বা ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী, বেশিরভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী।

হাসপাতালের বেডের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, হাসপাতালে বেডের কোনো ঘাটতি নেই। বেডের সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে তাগিদ দিচ্ছি, তারা যেন বেশি করে স্প্রে করে। যে ওষুধটা ব্যবহার করা হয়, সেটা যেন কার্যকর হয়।’

তিনি আরো বলেন, এখন ডেঙ্গু বাড়তি, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে এখানে ডেঙ্গু বাড়তি থাকবে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আইনি কাজ করতে হবে।