শিশুর দুধদাঁতের যত্ন

বাচ্চাদের দাঁত ওঠা বা পড়া নিয়ে অনেক সময় বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। সাধারণত বাচ্চাদের ছয়-সাত মাস বয়স থেকে তাদের দুধদাঁত গজাতে শুরু হয়। শিশুদের দুধদাঁত ওঠার সময় কিছু সমস্যা হতে পারে। ডা. সুরাইয়া আফরোজ এর সমাধান ও যত্ন নিয়ে জানাচ্ছেন।

দুধদাঁত ওঠার সময় বাচ্চাদের মাড়িতে ব্যথা বা জ্বর হতে পারে। এটি স্বাভাবিক। জ্বর ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। দুধদাঁত ওঠার সময়টায় হালকা গরম লবণ-পানিতে তুলা ভিজিয়ে শিশুর মুখের ভেতরের মাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত।

দুধদাঁত ওঠার সময় মুখ শিরশির করে বলে শিশুরা হাত বা যে কোনো কিছু পেলেই মুখে দেয়। তাই জীবাণুর সংক্রমণ এড়াতে শিশুর হাত ও খেলনা সবসময় বিশুদ্ধ পানিতে পরিষ্কার করে রাখুন। দুধদাঁত উঠতে ছয়-সাত মাসের বেশি সময় লাগলে উদ্বিগ্ন না হয়ে বিশেষজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক এক্স-রে করিয়ে দেখে জানাবেন দুধদাঁত বের হতে কতদিন বাকি আছে অথবা অনুপস্থিত কি না।

কয়েক বছরের মধ্যে পড়ে গেলেও দুধদাঁতেরও যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। এ দুধদাঁতগুলোই প্রথম কয়েক বছর শিশুর সুস্থতার প্রতীক। দুধদাঁতের যত্ন না নিলে তা সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ডেন্টাল ক্যারিজ পরবর্তী সময়ে সুস্থ দাঁত জন্মানোর বাধার কারণ হতে পারে। তাই জন্মের পর থেকেই শিশুর দাঁত ও মাড়ির যত্ন নিতে হবে। প্রথম দিকে প্রতিবার দুধ বা অন্য কিছু খাওয়ার পর পরিষ্কার আঙুল বা পাতলা কাপড় দিয়ে মুখের ভেতরে মাড়ি ও দাঁত ভালোভাবে যত্ন নিতে হয়। শিশুর দাঁত উঠতে শুরু করলে অতিরিক্ত লালা ঝরতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। মাড়ি কিড়মিড়, অস্বস্তিভাব বা ব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে হাত ধুয়ে আস্তে আস্তে মাড়ি মালিশ করুন। পরিষ্কার করে টিথার দেন। সঠিক সময়ে দাঁত ওঠার জন্য শিশুকে ছয় মাস বয়স থেকেই বিভিন্ন ধরনের খাবার চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে। শিশুর বয়স দেড় থেকে দুই বছর হলেই তাকে দাঁত ব্রাশ করা শেখাতে হবে। সন্তানকে ছয়-সাত বছর বয়স পর্যন্ত সঙ্গে নিয়েই সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে ব্রাশ করার অভ্যাস করান।

শিশুদের খাদ্যাভ্যাস যেমন চিনি, কৃত্রিম জুস, কোমল পানীয়, মিষ্টি, চকলেট, আইসক্রিম এমনকি আলুর চিপস থেকে দাঁত ক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ বেশি দেখা যায়, এগুলোর পরিবর্তে মৌসুমি ফরমালিনমুক্ত তাজা ফল, ফলের জুস, শাকসবজি, ডিম, দুধ, মাছ, মাংসে উৎসাহ দিতে হবে।

দুধদাঁতের শেকড়ের নিচে স্থায়ী দাঁতের গঠন শুরু হয়, তাই দুধদাঁতের সংক্রমণ স্থায়ী দাঁতকে ক্ষতি করতে পারে, আবার স্থায়ী দাঁত এলোমেলো বা উঁচু-নিচু হওয়ার কারণ দুধদাঁত সঠিক সময় না পড়া। সে কারণে নিয়মিত যত্নের পরও শিশুর দুধদাঁতে ক্যারিজ বা ক্ষয়ের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শিশুর বয়স দুই বছর হওয়ার পর বছরে অন্তত দুবার দন্ত চিকিৎসক দেখানো উচিত। শিশুর দুধদাঁত নড়ে গেলে তা টেনে তোলা উচিত নয়, হালকা নড়লে যদি উঠে ভালো, নয়তো নিকটস্থ ডেন্টিস্টের কছে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। নড়ে যাওয়া দাঁত মাটিতে পুঁতে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। এর সঙ্গে সুন্দর দাঁতেরও সম্পর্ক নেই।

তথ্য সূত্রঃ ডা. সুরাইয়া আফরোজ