কিডনি রোগী এক দশকে বেড়েছে আড়াই গুণ

চার বছর ধরে কিডনি রোগে ভুগছেন মিরপুরের বাসিন্দা আবু বক্কর ছিদ্দিক। সপ্তাহে দুবার তাকে ডায়ালাইসিস করতে হয়। আর এক দিন ইনজেকশন নিতে হয়। এই চিকিৎসার জন্য প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্য ওষুধ ও যাতায়াত খরচ বাবদ প্রয়োজন হয় আরো পাঁচ হাজার টাকা।

শুধু আবু বক্কর ছিদ্দিক নয়, তার মতো যারা কিডনি জটিলতায় ভুগছেন তাদের অনেকেই এ রকম হঠাৎ করেই জানতে পারেন কিডনি সমস্যার কথা। দীঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে সব পরিবারেই একই অবস্থা।

২০১২ সালে থেকে ২০২২ সালে অর্থাৎ গত এক দশকে বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনে কিডনি রোগী বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। ২০১২ সালে এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৯৭৫ জন। আর ২০২২ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৭১ জন। বেড়েছে ডায়ালাইসিস নেওয়া রোগীর সংখ্যাও। ২০১২ সালে ডায়ালাইসিস নেওয়া রোগী ছিল ২২ হাজার আর ২০২২ সালে হয়েছে ৬৭ হাজার ৬২০ জন।

কিডনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮০ শতাংশ বিকল না হওয়া পর্যন্ত কিডনি রোগের উপসর্গ বোঝা যায় না। ফলে বেশির ভাগ কিডনি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন শেষ সময়ে। তখন রোগীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে ডায়ালিসিস কিংবা কিডনি প্রতিস্থাপন। এতে বিপুল খরচ। এই ব্যয় বহন করতে না পেরে ৮০ শতাংশ রোগী চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবছর মারা যান আন্তত ১০ হাজার রোগী।

এক দশকে বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। ২০১২ সালে এই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৯৭৫। আর ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৭১। সঙ্গে বেড়েছে ডায়ালিসিস করা রোগীর সংখ্যা।

২০১২ সালে ডায়ালিসিস করান ২২ হাজার রোগী। ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৭ হাজার ৬২০। অর্থাৎ বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। প্রতিবছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার দিবসটি পালন করা হয়। এবার দিবসটির প্রতিপ্রাদ্য ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য, অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের প্রস্তুতি, প্রয়োজন ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তা’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক হারুন-আর-রশিদ বলেন, ‘আমাদের দেশে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের কারণ সম্পর্কে যেটুকু জানা গেছে, তার মধ্যে কিডনির প্রদাহ ৪০%, ডায়াবেটিস ৩৪%, উচ্চরক্ত চাপ ১৫% এবং অন্যান্য ১১% (কিডনিতে পাথর, সিস্ট, মূত্রনালির প্রতিবন্ধকতা)। আকস্মিক কিডনি রোগের কারণ ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, আকস্মিক রক্তক্ষরণ, ইনফেকশন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, আকস্মিক হৃদরোগ ইত্যাদি।

অন্যদিকে জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তথ্য বলছে, গত বছর এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন এক লাখ ৬৩ হাজার ৯৫ জন রোগী। এর মধ্যে নতুন রোগী ৯৭ হাজার ৮৫৭ জন আর ৬৫ হাজার ২৩৮ জন পুরনো রোগী। এই হিসাবে নতুন রোগী ৬০ শতাংশ। এর আগের বছর ২০২১ সালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন এক লাখ ২৪ হাজার ১২২ জন। সঙ্গে ডায়ালিসিস করা রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। ২০১৭-১৮ সালে এই হাসপাতালে ডায়ালিসিস করা রোগীর সংখ্যা ছিল দেড় হাজারের কম। ২০২২ সালে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৭৪৮।

কিডনি দিবস উপলক্ষে আজ বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন সংগঠন আলোচনাসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

একমাত্র ভরসা প্রতিরোধ

অধ্যাপক হারুন-আর-রশিদ বলেন, ‘কিডনি রোগ নির্ণয়ের জন্য এলবুস্টিক নামের একটি পরীক্ষা রয়েছে। এই পরীক্ষা দ্বারা তিনটি বিষয় জানা যায়, শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ, ইউরিনের পরিস্থিতি এবং রক্তচাপ। বাংলাদেশে প্রতি ৬০০ জন রোগীর জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সেখানে যাঁরা চিকিৎসাসেবা দেন তাঁদের যদি শুধু এলভোস্টিক সাপ্লাই দেওয়া যায়, তবে মাত্র ১৫ টাকা খরচে এই পরীক্ষা করা যাবে। আর এতে প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগী শনাক্ত করা যায়। এতে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিয়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কিডনি রোগী কমিয়ে আনা সম্ভব।’