ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা সংবেদনশীলতা, শারীরিক কার্যকর্ম করতে অক্ষম, রক্তপাতযুক্ত ক্ষত, হেমাটোমা, বমি, মাথা ঘোরা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, প্রচণ্ড ব্যথায় কাতর হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। কারণ :
দুর্ঘটনা, পুড়ে যাওয়া, শারীরিক নির্যাতন, আত্মহননের চেষ্টা, খেলতে গিয়ে আঘাত পাওয়া, যুদ্ধ করা বা ঝগড়া করা ইত্যাদি কারণে জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে করণীয় হলো-
আঘাত পেলে :
কম ধারাল বস্তু দিয়ে আঘাত পেলে সেই স্থানটি ফুলে যায়, ব্যথা হয়, লাল বা কালো হয়, নড়াচড়ায় অসুবিধা হয়। অনেক সময় আঘাতের কারণে নার্ভ ইনজুরি হয়। এটি কিন্তু মারাত্মক একটি সমস্যা। এসব ক্ষেত্রে আঘাতের স্থানে কোনো কিছু মালিশ করা যাবে না। প্রথম অবস্থায় ঠাণ্ডা বা বরফ দিতে দিতে হবে। আঘাদের অংশ বিশ্রামে রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। স্বল্পমাত্রায় ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। বুকে বা মাথায় অথবা পেটে আঘাত পেলে দেরি না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। হাত বা পা ছিঁলে যায়নিÑ এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। রাস্তাঘাট বা খেলার মাঠে পড়ে গিয়ে বা যানবাহনের দুর্ঘটনায় প্রায়ই এমন ঘটে। ছিঁলে গেলে সাধারণত চামড়া উঠে বা ছিঁড়ে যায়। তবে খুব বেশি গভীর হয় না। ময়লা বা ধুলাবালু আটকে যায়। অল্প রক্তপাত হতে পারে, বিশেষ করে প্রেসার পয়েন্ট বা হাড়ের ওপরের অংশে। প্রথমে নরমাল স্যালাইন দিয়ে পরিষ্কার করা ভালো। তবে নরমাল স্যালাইন না থাকলে ট্যাপের ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ছিঁলে যাওয়া স্থানটি পরিষ্কার করে ভালো কোনো অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন লাগাতে হবে। ছিঁলে যাওয়ার স্থানটি খুব বেশি গভীর না হলে অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন ক্রিম দিনে তিন-চারবার লাগানো যেতে পারে। আর গভীরতা বেশি হলে প্রথম এক-দুইদিন ড্রেসিং দিয়ে ঢেকে রাখা ভালো। তবে কখনো ড্রেসিং বেশিদিন দেওয়া ঠিক নয়। এ জাতীয় সমস্যা খোলা রেখে চিকিৎসা করা ভালো। অনেক সময় ক্ষতের গভীরে চামড়ার নিচে রক্ত জমাট বাঁধে, যা ড্রেসিং তৈরির মাধ্যমে চামড়ার পচন ধরায়। সেই ক্ষেত্রে ছোট করে কেটে রক্ত বের করে দেওয়া ভালো। যদি টিটেনাসের টিকা নেওয়া না থাকে, টিকা নিয়ে নেওয়া ভালো।
সুচ বা পিন জাতীয় বস্তুর আঘাত :
সাধারণত যারা সেলাইয়ের কাজ করেন, তাদের এ ধরনের আঘাত বেশি হয়। একে বলে নিডলস্টিক ইনজুরি। আঘাতটি অতিসামান্য হলেও অবহেলা করা উচিত নয়। ছোট সমস্যা অনেক সময় জটিল আকার ধারণ করে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের জন্য নিডলস্টিক ইনজুরি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
করণীয় :
প্রথমে চাপ দিয়ে রক্ত বের করে দিন। ভালো মানের অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন দিয়ে ড্রেসিং করুন। প্রয়োজেনে টিটেনাসের টিকা নিন। প্রথম ৩-৪ দিন দেখুন, আক্রান্ত স্থানটি লাল হয়ে ফুলে যায় কিনা। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হঠাৎ আঘাত পেলে :
হঠাৎ আঘাত পেলে শরীরের ওই নির্দিষ্ট স্থানে অতিরিক্ত চাপ পড়লে ফুলে যায়। এ ধরনের আঘাতে যে সমস্যা হয়, তার নাম সফট টিস্যু ইনজুরি। আঘাত হাত-পা, কোমর বা শরীরের অন্য স্থানের মাংসপেশি, হাড়, জয়েন্টে নার্ভ, লিগামেন্টের অবস্থানগত পরিবর্তনে ব্যথা হয়। মাথায় আঘাত পেলেও বাহ্যিক, অভ্যন্তরীণÑ দুই ধরনের ক্ষতি হয়। একেক স্থানে আঘাতে চিকিৎসার ধরন পরিবর্তিত হয়ে থাকে। সব আঘাতই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু মাথায় আঘাত সবসময় বেশি গুরুত্ব বহন করে।
হাত-পায়ে আঘাত পেলে করণীয় :
হঠাৎ দুর্ঘটনায় আঘাত, খেলাধুলার সময় আঘাত, মাংসপেশিতে হঠাৎ টান কিংবা পা পিছলে পড়ে গেলে সফট টিস্যু ইনজুরি হয়। আঘাতের তীব্রতা বেশি হলে হাড় ভেঙে যেতে পারে। হাড় ভেঙে গেছে সন্দেহ হলে অবশ্যই তা এক্স-রে করে দেখতে হবে এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসা নিতে হবে।
তথ্য সূত্রঃ ডা. মো. বখতিয়ার, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক
খাজা বদরুদদোজা মডার্ন হাসপাতাল সফিপুর