ঘুম দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ঘুম ঠিকমতো না হলে শরীর ও মনে নানান সমস্যা বাসা বাঁধে। শরীর আসলে ঘুমের ভেতর বহু কাজ সেরে নেয়। এক্ষেত্রে মস্তিষ্ক নিজের অপ্রয়োজনীয় তথ্য রিসাইকেল বিনে ফেলে দেয়। দরকারি তথ্য গচ্ছিত করে রাখে। এ ছাড়া শরীর নিজেকে সারিয়ে ফেলে। তাই তো ঘুম থেকে উঠলে আমাদের চাঙা লাগে। কাজে মন বসে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীরে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। হেলথলাইন বলছে, ইনসোমনিয়ার জন্য এই কয়েকটি সমস্যা হওয়া সম্ভব যেমন- স্ট্রোক, অ্যাজমা, কাঁপুনি, ইমিউনিটি কমে যাওয়া, ডায়াবিটিস, ওবেসিটি, হাই ব্লাড প্রেশার, হার্টের অসুখ ইত্যাদি। এ ছাড়াও মানসিক দিক থেকে অবসাদ, উৎকণ্ঠা, বিভ্রান্তি হতে পারে।
তাই যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে চোখের পাতা এক করতে গেলে ডায়েটে রাখতে হবে কিছু বিশেষ ধরনের খাবার। আসুন জানা যাক ঘুমের ডায়েট সম্পর্কে-
হার্ট হেলদি ফ্যাট জরুরি:
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানাচ্ছে, কিছু ফ্যাট রয়েছে যা হার্টের জন্য ভালো। কিন্তু এই ফ্যাট শুধু হৃৎপিণ্ডের ভালো করে না, পাশাপাশি শরীরের উপকারও করে। এই ফ্যাট শরীরে সেরোটোনিন লেভেল বাড়িয়ে দেয়। ফলে আমাদের ঘুমাতে সুবিধা হয়। এমনকী দূর হয় অনিদ্রা। এই কারণে আপনি খেতে পারেন ওয়ালনাট, আমন্ড, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি। এই ধরনের বাদামে রয়েছে উপকারী ফ্যাট। তাই নিয়মিত এই ধরনের বাদাম খাওয়া উচিত। তাহলেই দুই চোখের পাতা এক হবে অনায়াসে।
গোটা দানাশস্য খান:
আপনাকে খেতে হবে গোটা দানাশস্য। এই খাবারগুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে কমপ্লেক্স কার্ব। এই কার্বোহাইড্রেট কিন্তু শরীরে বাড়িয়ে দিতে পারে সেরোটোনিন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ডাল, আটার রুটি, ওটস এই খাবারের তালিকায় পড়ে। তাই পর্যাপ্ত সময় ঘুমের স্বার্থে এই খাবার নিয়মিত খাওয়া উচিত। তবে ভুল করেও ময়দা, বেসন, সাদা চাল খাবেন না। এতে অহেতুক সমস্যা বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুণ।
হাই ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত খাবার:
আসলে কিছু খনিজ রয়েছে যা ঘুম আনতে সহয়তা করে। এই তালিকায় রয়েছে ম্যাগনেশিয়ামও। এই খনিজ দুই চোখের পাতা এক করতে সাহায্য করে বলে বিভিন্ন গবষণায় ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। তাই বিশেষজ্ঞরা অনিদ্রায় আক্রান্তদের ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত খাবার খেতে বলেন। এক্ষেত্রে সবুজ শাকপাতায় ভালো পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে। বিশেষত, পালংশাক হল উপকারী। এ ছাড়াও তালিকায় আছে বিভিন্ন ধরনের বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি।
কিছু পানীয়:
কিছু পানীয় কিন্তু ঘুম এনে দেয়। এই তালিকায় অবশ্যই আসবে দুধের কথা। গরম দুধ রাতেরবেলা খেয়ে ঘুমালে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন। এছাড়া আপনাকে কিছু বিশেষ ধরনের হার্বাল টি খেতে হবে। এক্ষেত্রে চায়ের বদলে গরম জলে মেশাতে পারেন আদা, তুলসী, পুদিন। এই সব উপদান কিন্তু শরীর সুস্থ রাখতে পারে। আর ঘুম পায় জলদি। তবে এই ধরনের চা খেতে হবে শোয়ার ঠিক ২ ঘণ্টা আগে।
প্রোটিন খাওয়া:
প্রোটিন জাতীয় খাবারে থাকে ট্রিপটোফ্যান। এই উপাদানটি ঘুম আনে। তবে রেডমিট খাওয়া যাবে না। বরং খান ছোট মাছ থেকে শুরু করে চিকেন। এমনকী ডিমের সাদাতেই এই উপাদান থাকে ভরপুর। তাই প্রায় প্রতিদিনই প্রোটিনের মধ্যে কোনও একটি বিকল্প রাখুন। তবে প্রাণীজ প্রোটিন বেশি উপকারী।
তথ্য সূত্রঃ যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক