প্রাচীন কাল থেকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেসব ঔষধি গাছ ব্যবহার হয়ে আসছে তার মধ্য অন্যতম \’পাথরকুচি\’। এটি দেড় থেকে দুই ফুট উঁচু হয়। পাতা মাংসল ও মসৃণ, আকৃতি অনেকটা ডিমের মতো। চারপাশে আছে ছোট ছোট গোল খাঁজ। আর এই খাঁজ থেকে নতুন চারার জন্ম হয়। অনেক সময় গাছের বয়স হলে ওই গাছের খাঁজ থেকে চারা গজায়। পাথরকুচি পাতা মাটিতে ফেলে রাখলেই অনায়াসে চারা পাওয়া যায়। কাঁকর মাটিতে সহজেই জন্মে। কিন্তু ভেজা, স্যাঁতসেঁতে জায়গায় দ্রুত বাড়ে।
গ্রামীণ চিকিৎসার মধ্যে \’পাথরকুচি\’ অন্যতম উপকারী। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদেন মতে, পাথরকুচি পাতা কিডনি রোগসহ বিভিন্ন রোগের বিশেষ উপকারে আসে। তাহলে চলুন জেনে নেই পাথরকুচি পাতার অবিশ্বাস্য ঔষধি গুণাগুণ:-
১) কিডনির পাথর অপসারণ:
পাথরকুচি পাতা কিডনি এবং গলগণ্ডের পাথর অপসারণ করতে সাহায্য করে। দিনে দুবার ২ থেকে ৩টি পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খান।
২) পেট ফাঁপা:
অনেক সময় দেখা যায় পেটটা ফুলে গেছে, প্রসাব আটকে আছে, আধোবায়ু সরছে না, সে ক্ষেত্রে একটু চিনির সাথে এক বা দুই চা-চামচ পাথরকুচির পাতার রস গরম করে সিকি কাপ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এর দ্বারা মূত্র তরল হবে, আধো বায়ুরও নিঃসরণ হবে, ফাঁপাটাও কমে যাবে।
৩) রক্তপিত্ত:
পিত্তজনিত ব্যথায় রক্তক্ষরণ হলে দু’বেলা এক চা-চামচ পাথর কুচির পাতার রস দুদিন খাওয়ালে সেরে যাবে।
৪) মৃগী:
মৃগী রোগাক্রান্ত সময়ে পাথর কুচির পাতার রস ২-১০ ফোঁটা করে মুখে দিতে হবে। একটু পেটে গেলেই এ রোগের উপশম হবে।
৫) সর্দি:
সর্দি পুরান হয়ে গেছে, সেই ক্ষেত্রে পাথরকুচি বিশেষ উপকারী। পাথরকুচি পাতা রস করে সেটাকে একটু গরম করতে হবে এবং গরম অবস্থায় তার সাথে একটু সোহাগার খৈ মেশাতে হবে। তিন চা-চামচের সাথে ২৫০ মিলিগ্রাম যেন হয়। তা থেকে দুই চা চামচ নিয়ে সকালে ও বিকালে দুবার খেলে পুরান সর্দি সেরে যাবে এবং সর্বদা কাশি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
৬) শিশুদের পেট ব্যথায়:
শিশুর পেটব্যথা হলে, ৩০-৬০ ফোঁটা পাথরকুচির পাতার রস পেটে মালিশ করলে ব্যথার উপশম হয়। তবে পেট ব্যথা নিশ্চিত হতে হবে।
৭) ত্বকের যত্ন:
পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া এর মধ্যে জ্বালাপোড়া কমানোর ক্ষমতাও আছে। যারা ত্বক সম্বন্ধে সচেতন, তারা পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন। ব্রণ ও ফুস্কুড়ি জাতীয় সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।
৮) কাটাছেঁড়ায়:
টাটকা পাতা পরিমাণ মত হালকা তাপে গরম করে কাটা বা থেতলে যাওয়া স্থানে সেক দিলে আরাম পাওয়া যায়।
৯) পাইলস:
পাথরকুচি পাতার রসের সাথে গোল মরিচ মিশিয়ে পান করলে পাইলস ও অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১০) জন্ডিস নিরাময়ে:
লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে রক্ষা করতে তাজা পাথরকুচি পাতার জুস অনেক উপকারী।
১১) কলেরা, ডাইরিয়া বা রক্ত আমাশয়:
তিন মিলিলিটার পাথরকুচি পাতার জুসের সাথে ৩ গ্রাম জিরা এবং ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে কয়েক দিন খেলে এসব রোগ থেকে উপকার পাওয়া যায়।
১২) শরীর জ্বালাপোড়া:
দু-চামচ পাথরকুচি পাতার রস, আধা কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দুবেলা খেলে উপশম হয়।
১৩) পোকা কামড়:
বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে এই পাতার রস আগুনে সেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
১৪) উচ্চ রক্তচাপ:
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মুত্রথলির সমস্যা থেকে পাথরকুচি পাতা মুক্তি দেয়।