ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ

বিশ্বে নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার এক নম্বরে আছে। কিন্তু উন্নত বিশ্বে নিয়মিত স্ক্রিনিং আর সচেতনতার কারণে একদম প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার ধরা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত বিশ্বে শতকরা ৬৫ ভাগ স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। এ কারণে সেখানে ব্রেস্ট ক্যান্সারজনিত মৃত্যু অনেকটা কমে এসেছে। ফলে সারা বিশ্বে নারীদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর এক নম্বর কারণ এখন ফুসফুস ক্যান্সার! ব্রেস্ট ক্যান্সার নয়।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ

ব্রেস্ট ক্যান্সারের ৮টি লক্ষণ:

১) স্তনে চাকা ও লাম্প বা পিন্ড অনুভব করা যা ব্যথাহীন ও খুব দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে আকারে।

২) স্তনের ত্বকে বিভিন্ন পরিবর্তন যেমন চামড়া কুঁচকে যাওয়া, কমলার খোসার মত ছোট ছোট ছিদ্র দেখা দেয়া, চামড়ায় টোল পড়া, দীর্ঘস্থায়ী ঘা ইত্যাদি।

৩) নিপল (বোঁটা) দিয়ে রস নিঃসরণ হওয়া বা রক্তপাত হওয়া।

৪) নিপল ও তার আশেপাশের (Areola) কালো অংশা ফুঁসকুড়ি ও চুলকানি হওয়া।

৫) স্তনে দীর্ঘদিন ব্যথা অনুভূত হওয়া।

৬) স্তনের আকার পরিবর্তন হওয়া।

৭) গলার কাছে অথবা বগলে চাকা অনুভব করা।

৮) স্তনের বোটা ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া অথবা বোটা দিয়ে পুঁজ নির্গত হওয়া।

ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে পরীক্ষা পদ্ধতি:

২০ বছর বয়স থেকেই প্রত্যেকের উচিত স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে নিজের স্তন পরীক্ষা করা। মাসিক শুরুর ৫-৭ দিন পর এই পরীক্ষা করতে হবে যখন স্তন নরম ও কম ব্যথা থাকে।

১) শুয়ে বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের স্তনকে চারটি ভাগে ভাগ করে প্রতিটি অংশের অভ্যন্তরে কোন চাকা বা দলার মতো আছে কিনা তা অনুভব করুন।

২) স্তনের আকৃতির বিশেষ কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা দেখুন।

৩) সাধারণত দুই স্তনের আকার এক রকম নাও হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়। তাই চিন্তার কিছু নেই।

৪) নিপল থেকে অকারণে কোন তরল রস বের হয় কিনা তা লক্ষ্য করুন। তবে প্রসব পূর্ববর্তী বা প্রসব পরবর্তী নিঃসরণকে এর সাথে মিলিয়ে ফেলা চলবে না।

৫) বগলে কিংবা ঘাড়ে কোন চাকা অনুভব করতে পারছেন কিনা লক্ষ্য করুন।

৬) আপনার বাম হাত দিয়ে ডান পাশের ও ডান হাত দিয়ে বাম পাশের স্তন পরীক্ষা করুন।

এই পরীক্ষা করার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যাতে আপনার সম্পূর্ণ স্তনটি পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে আপনি নিপল থেকে শুরু করে বৃত্তাকারভাবে বাহিরের দিকে যেতে পারেন অথবা উপর-নিচ করে সম্পূর্ণ স্তন পরীক্ষা করতে পারেন। লক্ষ্য রাখবেন যাতে আপনি সকল টিস্যু (চামড়া থেকে স্তনের নিচের বুকের খাঁচা পর্যন্ত) অনুভব করেছেন। চামড়া ও চামড়ার অল্প নিচের অংশের জন্য অল্প চাপ দিন, স্তনের মাঝের অংশের জন্য মাঝারি চাপ দিন ও স্তনের নিচের অংশ অনুভবের জন্য গভীরভাবে চাপ দিন।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে?

• স্তনে চাকা বা পিণ্ড দেখা দিলে

• স্তনের বোঁটার কোন ধরনের পরিবর্তন, যেমন ভেতরে ঢুকে গেলে, অসমান বা বাঁকা হয়ে গেলে

• স্তনের বোঁটা দিয়ে অস্বাভাবিক রস বের হলে

• স্তনের চামড়ার রং বা চেহারায় পরিবর্তন হলে

• বাহুমূলে পিণ্ড বা চাকা দেখা গেলে

ম্যামোগ্রাম এক বিশেষ ধরনের এক্স রে যন্ত্র যাতে স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে।

তবে অধ্যাপক নাজনীন নাহার বলছেন, বয়স ৩০ বা ৩৫ হবার পর সব নারীর উচিত নিয়মিত নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখা। এজন্য মূলত তিনটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে।

• ম্যামোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্স রে, যার সাহায্যে স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে।

• সুনির্দিষ্ট নিয়মে চাকা বা পিণ্ড আছে কিনা, চিকিৎসকের মাধ্যমে সে পরীক্ষা করানো।

• নিজে নিজে নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী স্তন পরীক্ষা করা।