ক্যান্সার সবার কাছেই একটি আতঙ্কের নাম, সেই সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে নতুন মহা আতঙ্ক ‘করোনাভাইরাস’। বিশ্বব্যাপী এ করোনা মহামারিতে ক্যান্সার রোগী ও তার স্বজনেরা পড়েছেন মহা বিপাকে, কী করবেন তারা। এ পরিস্থিতিতে ডাক্তারাও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন এ বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে। আমরা ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছি, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তাদেরই বেশি, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন- অ্যাজমা, COPD, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ হৃদযন্ত্রের রোগ এবং ক্যান্সার আক্রান্ত বা ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন রোগীরা।
কারণ কিছু ক্যান্সার আছে যা সরাসরি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, যেমন- লিউকেমিয়া, লিমফোমা ইত্যাদি। ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা যেমন- কেমোথেরাপি, বোন মেরো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইত্যাদি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই এ অবস্থায় গুরুত্ব দিতে হবে করোনা সংক্রমণ যাতে রোধ করা যায় সেই বিষয়ে।
কী করবেন : শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখবেন- অন্তত ৬ ফুট, কারও সঙ্গে করমর্দন বা কোলাকুলি করা যাবে না। নিয়মিত দুই হাত সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার রাখবেন। হাত দিয়ে নাক মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকবেন। ব্যবহার্য জিনিসপত্র এবং আসবাবপত্র জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। পরিবারের কোনো সদস্যের করোনা রোগের উপসর্গ দেখা দিলে তাদের থেকে দূরে থাকবেন ও মাস্ক ব্যবহার করবেন।
ঘরের বাইরে যাবেন না, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনে চেষ্টা করবেন আপনার ঘরে এসে স্যাম্পল নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে। সেটা সম্ভব না হলে, বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। এর মাঝে কারো করোনা রোগের উপসর্গ দেখা দিলে যেমন-জ্বর, শুকনা কাশি, সর্দি, মাথাব্যথা, গায়ে ব্যথা বা ডায়রিয়া, অনতিবিলম্বে হটলাইট নাম্বারে যোগাযোগ করবেন এবং RT-PCR Test এর মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে করোনা সংক্রমণ আছে কিনা।
মানসিক চাপমুক্ত থাকুন : সারাক্ষণ নিউজ দেখা থেকে বিরত থাকুন এবং ভালো লাগে এমন কাজে মনোনিবেশ করুন। মেডিটেশন একটা ভালো উপায় হতে পারে অথবা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটান। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা এমনিতে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভোগেন, তার ওপর এ আতঙ্ক তাদের মনোবল নষ্ট করে দিতে পারে। তাই পরিবারের সবার সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা : এ বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। আমরা সবসময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এ সময়ে আমাদের চেষ্টা থাকছে, তাদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যেহেতু এ রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম। তাই আমরা জোর দিচ্ছি টেলিমেডিসিনের ওপর। আপনার সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন এখন আপনার করণীয় কি? অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা ১-৩ মাস পর্যন্ত পেছানো সম্ভব।
সেক্ষেত্রে ক্যান্সার এর ধরন ও কী পর্যায়ে রয়েছে সেটার ওপর নির্ভর করে শিরার মাধ্যমে দেওয়া কেমোথেরাপির পরিবর্তে মুখে খাওয়া যায় এমন কেমোথেরাপি ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয়। তবে লিউকেমিয়া, লিমফোমা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।
রেডিওথেরাপি চিকিৎসা যাদের রোগমুক্তির জন্য অনতিবিলম্বে অত্যবশ্যকীয় যেমন- হেডনেক ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি ক্ষেত্রে ছাড়া অথবা যারা অলরেডি থেরাপি নিচ্ছেন তাদের ছাড়া, বাকিদের জন্য পুনঃনির্ধারণ করা হচ্ছে। সার্জারির ক্ষেত্রে আমাদের চেষ্টা থাকছে, অন্যান্য চিকিৎসার মাধ্যমে সময়টা পিছিয়ে নেওয়ার, তবে অনেক ক্ষেত্রে যেমন- ক্যান্সার দ্বারা অন্ত্র বাধাগ্রস্ত হলে, আমাদের ইমারজেন্সি অপারেশন করতে হয়। ক্যান্সার রোগীরা এ পরিস্থিতিতে ফোনে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
লেখক : সার্জারি বিশেষজ্ঞ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।