সারাবিশ্বে প্রতিনিয়ত মরণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন হাজারও মানুষ। তবে এই ভাইরাস সবার দেহে সমান প্রভাব ফেলে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
যদিও আগে থেকেই চিকিৎসকরা বলে আসছেন, যাদের অন্য কোনো রোগ রয়েছে, তাদের এই ভাইরাসে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। কিন্তু পরে দেখা গেছে, এমন মানুষ এই ভাইরাসে সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছেন যাদের আগে থেকে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না।
আবার যাদের দেহে করোনার সংক্রমণের কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি, তাদের অনেকেরই শরীরে করোনা পাওয়া গেছে।
অনেকের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া হয় মৃদু থেকে মাঝারি। আর প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের বেলায় দেখা দেয় গুরুতর অসুস্থতা এবং আক্রান্তদের আধা থেকে এক-শতাংশের মৃত্যু হয়ে থাকে।
এখন প্রশ্ন হলো– এর কারণ কী? কোথায় লুকানো আছে এর রহস্য?
এই রহস্য খুঁজে বের করতে লাখো মানুষের ডিএনএর ভাণ্ডার ব্যবহার করছেন বিজ্ঞানীরা। এর নাম ইউকে বায়োব্যাংক। যাতে ৫ লাখ স্বেচ্ছাসেবকের রক্ত, থুতু ও প্রস্রাবের নমুনা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এক দশকব্যাপী সময়ের তথ্য সংরক্ষিত আছে। এতে এখন যোগ হচ্ছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত উপাত্ত।
এসব তথ্য আগে ক্যান্সার, স্ট্রোক বা স্মৃতিভ্রংশ সম্পর্কে জানার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এবার তাতে যোগ হচ্ছে করোনাভাইরাস পজিটিভ টেস্ট সম্পর্কিত তথ্য এবং হাসপাতাল ও স্থানীয় ডাক্তারের দেয়া উপাত্ত।
এই তথ্যভাণ্ডারে ঢুকতে পারেন পৃথিবীর নানা দেশের ১৫ হাজারেরও বেশি বিজ্ঞানী।
এ প্রকল্পের প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক রোরি কলিনস বলছেন, ‘আমরা হয়তো খুব দ্রুত কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করে ফেলতে পারি’। তিনি বলেন, ‘এটি হতে পারে গবেষকদের জন্য এক স্বর্ণখনি।’
অধ্যাপক কলিনস বলছেন, করোনা সংক্রমিতদের মধ্যে পার্থক্যগুলো কী? তা জানার জন্য ইউকে বায়োব্যাংকের উপাত্ত পরীক্ষা করছি। তাদের জিনগত গঠনে কী পার্থক্য আছে? এ পার্থক্যের সঙ্গে কি তাদের রোগ প্রতিরোধী বা ইমিউনিটি ক্ষমতার সম্পর্ক আছে? তাদের পূর্ববর্তী স্বাস্থ্যগত অবস্থার মধ্যে কী কোনো ভিন্নতা আছে?
গবেষকরা একেকজনের পুরো জিনোমটাই তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করবেন– দেখবেন ডিএনএর মধ্যে কোথায় কোথায় অতিক্ষুদ্র সব পার্থক্য আছে। বিশেষ করে তারা পরীক্ষা করে দেখবেন, এসিই-টু নামে একটি জিনকে. যা এক ধরনের রিসেপটর তৈরিতে সহায়তা করে। যার মাধ্যমে করোনাভাইরাস শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে সেখানকার কোষগুলোকে সংক্রমিত করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রকেফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জঁ-লরেন্ট কাসানোভার নেতৃত্বে আরেকটি দল্ও এমন এক গবেষণা করছে।
অধ্যাপক কাসানোভা বলছেন, অতীত গবেষণায় দেখা গেছে– ‘কিছু লোকের ক্ষেত্রে যাদের ইমিউনিটির জন্মগত কোনো ত্রুটি আছে, তাদের ফ্ল বা হারপিসের মতো কিছু রোগ হলে তা গুরুতর চেহারা নিতে পারে। এমন হতে পারে যে এই জন্মগত ত্রুটি দশকের পর দশক দেহে সুপ্ত থাকতে পারে। যতদিন পর্যন্ত না তিনি ওই বিশেষ মাইক্রোবে সংক্রমিত হন, ততদিন এটি কেউ জানতেই পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচিতে এটিই দেখা হবে যে কোভিডের ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটে কিনা।’