চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের শক্তির কাছে আক্ষরিক অর্থেই সবাই কাবু। করোনার মারণ ক্ষমতার প্রতিষেধক নেই। এমন একটা সংকটময় পরিস্থিতিতে ভেষজ প্রাকৃতিক উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। মানুষ আদিকাল হতে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করে আসছে। খাবারের স্বাদ বাড়াতে মসলার বিকল্প নেই। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় সব তরকারিতেই ব্যবহার করা হয়। হাজার বছর ধরে এশিয়াতে নানাভাবে হলুদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং বিশ্বাস করা হয় এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
মরিচ
আমাদের অনেকের প্রতিদিনের খাবারের রুটিনে থাকে কাঁচা মরিচ। আমাদের নিত্যদিনের প্রায় প্রতিটি খাবারে ব্যবহার করা হয় কাঁচা মরিচ। কাঁচা মরিচ শুধু যে খাবার ঝাল করতে তা নয়, এই মরিচে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। কাঁচা মরিচে রয়েছে প্রচুর ডায়াটারি ফাইবার, থিয়ামিন, রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, ফলেট, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস। সেইসঙ্গে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি পুষ্টিকর উপাদান। যেমন- ভিটামিন এ, সি, কে, বি-৬,পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাগনেসিয়াম। এর সবগুলো উপাদানই আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। কাঁচা মরিচে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ থাকায় হাড়, দাঁত ও মিউকাস মেমব্রেনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ভিটামিন সি\’র পরিমাণও মরিচে বেশি থাকে। তাই ত্বক ও মুখে বলিরেখা পড়তে দেয় না। কাঁচা মরিচ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টসমৃদ্ধ, যা শরীরকে জ্বর, সর্দি-কাশি ইত্যাদি থেকে বাঁচায়। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে কাঁচামরিচের হাত ধরে।
যারা কখনই মরিচ খায়নি তাদের চেয়ে যারা সপ্তাহে অন্তত চার বার মরিচ খায় তাদের মৃত্যুঝুঁকি কম। হার্ভাড স্কুলের একটি গবেষণায়ও দেখা গেছে, যারা বেশি মরিচ খান তাদের মধ্যে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার হার কম। তবে তার মানে এই নয়, প্রচুর মরিচ খাওয়া শুরু করলেই তা আপনার স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখবে।
২০১৯ সালে ইতালিতে এক গবেষণায় দেখা গেছে, মরিচ খাওয়ার অভ্যাস মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে দেয়। তবে এটি শুধু পর্যবেক্ষণ, এটা জানা অসম্ভব যে মরিচ মানুষকে দীর্ঘায়ু হতে সহায়তা করে নাকি স্বাস্থ্যবান মানুষদের মধ্যেই স্বভাবতই মরিচ খাওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতা রয়েছে।
হলুদ
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় সব পরিবারে হলুদের প্রচলন রয়েছে। কারকিউমিন নামক পদার্থ থাকায় এটিকে মানব শরীরের জন্য উপকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। প্রদাহ, চাপ ও বিভিন্ন শারিরীক সমস্যায় বিকল্প ওষুধ হিসেবে হলুদের ব্যবহার রয়েছে। অসংখ্য গবেষণায় ল্যাবরেটরিতে কারকিউমিনে ক্যান্সারবিরোধী প্রভাব থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হলুদে তাপ দেওয়া হলে এটির রাসায়নিক উপাদানে পরিবর্তন আসে, ফলে এর অনেক উপকারী গুণ নষ্ট হয়ে যায়।
যষ্টিমধু
অন্যতম প্রধান একটি ভেষজ খাবার। এটা মূলত গাছের শিকড়। গ্লাইসিরাইজিন বিভিন্ন কঠিন রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার রোধ করে। এছাড়াও যষ্টিমধু রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন ছত্রাক প্রতিরোধ করতে পারে। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে, পৃথিবীতে যত ওষুধ তৈরি হয়, তার প্রায় প্রতিটিতে যষ্টিমধু দেওয়া হয়। ঠাণ্ডা লাগা, ঠান্ডাজ্বর, কাশি, গলাব্যথা, রক্তক্ষরণ বন্ধ করতেও যষ্টিমধুর তুলনা নেই।
দারুচিনি
দারুচিনিতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান পেটে ব্যাক্টেরিয়ার কারণে যে সব অসুখ হয় তা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে দারুচিনি। নিয়মিত মধু আর দারুচিনির গুঁড়ো খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। শরীরের ভেতরে অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো বিভিন্ন রকমের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। ঠাণ্ডা-কাশি থেকে রেহাই পেতে দারুচিনি বেশ কার্যকর। এক গ্লাস পানিতে মধু ও দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন প্রতিদিন।
নিম
নিম একটি ঔষধি গাছ। নিম গাছের সমস্ত অংশ ব্যবহার করা যায়।বর্তমান বিশ্বে নিমের কদর তা কিন্তু এর অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যহারের জন্য। নিম ছত্রাকনাশক হিসেবে, ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসেবে ভাইরাসরোধক হিসেবে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে,দন্ত চিকিৎসায় ব্যাথামুক্তি ও জ্বর কমাতে ব্যবহার করা হয়। কফজনিত বুকের ব্যথায় অনেক সময় বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে। এ জন্য ৩০ ফোটা নিম পাতার রশ সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিতে ৩/৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমবে। গর্ভবতী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এ ঔষধটি নিষেধ।