দেহের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অংশ কিডনি। তাই এই অঙ্গ সংক্রান্ত শারীরিক জটিলতাকে নীরব ঘাতক বলা হয়। চুপি চুপি এ রোগ দেহে বাসা বেঁধে আপনাকে একদম শেষ করে দিতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতাগুলোর মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের পরই অবস্থান করছে কিডনি ড্যামেজ ক্যানসার। কেবলমাত্র আমেরিকাতেই প্রায় ২৬ মিলিয়ন মানুষ কিডনি সমস্যায় ভুগছেন।
ভয়ের বিষয় হলো বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে তারা কিডনিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। ফলাফলস্বরূপ যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে হারাতে হচ্ছে প্রাণ। কিছু সাধারণ লক্ষণে বুঝতে পারবেন আপনার কিডনিতে কোনো সমস্যা রয়েছে কি না। সেগুলো কী? চলুন জেনে নিই-
প্রস্রাবে সমস্যা-
কিডনি রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ হলো তুলনামূলক কম প্রস্রাব হওয়া। একই সাথে রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়াও কিডনি সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ করে। সাধারণত কিডনির ফিল্টার নষ্ট হয়ে গেলে এমন সমস্যা দেখা দেয়।
প্রস্রাবে রক্ত-
কিডনি দেহের ভেতর থেকে রক্তে থাকা বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের সঙ্গে বাইরে বের করে দেয়। কিন্তু কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রস্রাবের ব্লাড সেলও বের হয়ে যায়। কিডনিতে পাথর, কিডনি ইনফেকশন ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা দেখা দিলে বুঝতে হবে দেহ থেকে প্রোটিন বের হয়ে যাচ্ছে।
প্রস্রাবের সময় ব্যথা-
প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব করা কিডনি সমস্যার আরেকটি লক্ষণ। মূলত প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ। এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়লে জ্বর হয় ও পিঠের পেছন দিকে ব্যথা হয়।
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া-
হঠাৎ করেই কি আপনার পায়ের পাতা ও গোড়ালি ফুলে যাচ্ছে? তবে আজই সতর্ক হোন। এটি কিডনি রোগের অন্যতম লক্ষণ। কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে দেহের সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে পায়ের পাতা ও গোড়ালি ফুলতে থাকে।
খাবারে অরুচি-
মাঝেমধ্যে খাবারে অরুচি হতেই পারে কিন্তু ঘন ঘন যদি খাবারে অরুচি হয়, বমি বমি ভাব লাগে তবে অবহেলা করবেন না। দেহে বিষাক্ত পদার্থ উৎপাদন হওয়ার কারণে এমন সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
চোখ সংলগ্ন এলাকা ফুলে যাওয়া-
কিডনি থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে গেলে চোখের চারপাশ ফুলে যায়। তাই এমন সমস্যাকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
মাংসপেশিতে টান পড়া-
ইলেক্ট্রোলাইট উপাদানের ভারসাম্যহীনতার কারণে কিডনি সমস্যা হয়ে থাকে। আর এই উপাদানটি কমে গেলে মাংসপেশি টান, খিঁচুনি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
ত্বকে চুলকানি হওয়া-
রক্তে মিনারেল এবং পুষ্টি উপাদান ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে ত্বকে র্যাশ এবং চুলকানি দেখা দিয়ে থাকে। মূলত এর জন্য দায়ী সঠিকভাবে কিডনি কাজ না করা।
ক্লান্ত অনুভব করা, মনোযোগ কমে যাওয়া-
কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে দূষিত পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে দেহ খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায়। পাশাপাশি কাজের মনোযোগও হারিয়ে যায়। এমনটা হলে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়।
শ্বাস ছোট হয়ে যাওয়া-
কিডনি সমস্যা হলে ফুসফুসে তরল পদার্থ জমা হয়। রোগীর রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এ কারণে শ্বাসের সমস্যা হয়, অনেকের শ্বাস ছোট হয়ে যায়।
উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেটেস্টবিডিনিউজ/কেএস