মহামারী করোনাকে দমানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এন্টিবডি ও এন্টিজেন টেস্ট কিট বানিয়েছে বলে দাবি করেছে। তবে এ নিয়ে বিতর্কের মুখে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কিছু তথ্য জানিয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি।
অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি বলেন, র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টিং কিট এখনও কোথাও আবিষ্কৃত হয়নি। মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) তাদের দেশে তৈরি তিন থেকে চারটি র্যাপিড এন্টিবডি টেস্ট কিটের অনুমোদন দিয়েছে। তবে সেগুলো র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টিং কিট নয়।
এদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত টেস্টিং কিট ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ র্যাপিড টেস্টিং কিটের মাধ্যমে একই সঙ্গে এন্টিজেন-এন্টিবডি শনাক্ত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন এই কিট উদ্ভাবনকারী দলের প্রধান অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি গণমাধ্যমকে বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্তে দুই রকমের টেস্ট রয়েছে, একটি হচ্ছে ভাইরাস ডায়াগনসিস করার টেস্ট, আরেকটি আমার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু সেই টেস্ট। এই ডায়াগনস্টিক টেস্টের মধ্যেও দুই ধরনের টেস্ট রয়েছে। একটি ওয়েট টেস্ট এবং ড্রাই টেস্ট।
ডা. লিয়াকত আলি বলেন, ‘ল্যাবরেটরিতে যন্ত্রপাতি সেটআপ করে যে টেস্ট করা হয় সেটা হচ্ছে ওয়েট টেস্ট। আরেকটা হচ্ছে কোনো কার্টিজ, কিট বা পেপার দিয়ে যেগুলো করা হয় সেগুলো হচ্ছে ড্রাই টেস্ট। যেমন প্রেগনেন্সি টেস্ট, ডায়াবেটিস টেস্ট ওয়েট টেস্ট এবং ড্রাই টেস্টেও করা যায়। ড্রাই টেস্ট হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে র্যাপিড টেস্ট। ডায়াগনস্টিক টেস্টেরও র্যাপিড টেস্ট রয়েছে, আবার ইমিউন স্ট্যাটাসেরও ওয়েট টেস্ট আছে। যখন ডায়াগনস্টিক টেস্ট করছি তার মধ্যেও আবার কয়েক ধরনের টেস্ট রয়েছে। যার একটা হচ্ছে নিউক্লিক অ্যাসিড।’
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস কিছু প্রোটিনের আবরণ তৈরি করে। লিকুইড মেমব্রেনে চার ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়। পাশাপাশি নন স্ট্রাকচারাল কিছু প্রোটিন তৈরি হয়। এই প্রোটিন থেকেও ভাইরাসকে আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা চলছে। করোনাভাইরাস ব্লাডে খুব কম প্রবেশ করে। ব্লাড থেকে এই ভাইরাসের আরটিপিসিআর সেন্সিভিটি এক শতাংশও না। ভাইরাস থেকে কিছু প্রোটিন ব্লাডে প্রবেশ করে এটাকেই বলা হয় এন্টিজেন। ব্লাডে ভাইরাসের ওপরের সারফেসে যে প্রোটিন আছে সেই প্রোটিন এন্টিবডি তৈরি করে। অর্থাৎ প্রোটিনকে রিকগনাইজ করলে ব্লাডের বিভিন্ন রকম প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি হচ্ছে এন্টিবডি।
কোনো টেস্টের সেন্সিভিটি কত তার মানে হচ্ছে কত কম ভাইরাসকে আমরা ডিটেক্ট করতে পারছি। স্পেসিফিক টেস্ট করলে শুধু ওই ভাইরাসকেই ডিটেক্ট করবে, অন্য ভাইরাসকে শনাক্ত করবে না। টেস্ট মানে হচ্ছে আমরা স্পেসিফিকভাবে ভাইরাস শনাক্ত করতে হবে। সুতরাং এন্টিবডি বা এন্টিজেন টেস্ট করার সময় কতটা প্লট রিঅ্যাকশান বন্ধ করছি তা দেখতে হবে। এন্টিজেনের সময় আমাকে আগে ভাইরাসকে আইন্ডেন্টিফাই করতে হবে। ভাইরাসের এন্টিজেন এর ডিটারমিনার কী এসব বিস্তারিত জানতে হবে। তাহলে সঠিকভাবে ভাইরাসটি শনাক্ত করা সম্ভব।
ডা. লিয়াকত আলি বলেন, টেকনোলজি ডেভেলপ করে আমি একটি প্লেটে করলাম, না পেপারের করলাম, র্যাপিড করলাম এগুলো হচ্ছে প্রযুক্তি, আর ভাইরাসে প্রোটিনের চরিত্র কী, সে কয়দিনে আসে, এন্টিবডি কয়দিনে তৈরি হয়, সিকোন্সিং করা এগুলো হচ্ছে বিজ্ঞান। এন্টিজেনের ডিটারমিনের পুরো রহস্য উন্মোচন হয়নি। মাত্র কিছু কিছু জার্নাল আসতে শুরু করেছে।
আসল টেস্ট হচ্ছে ওয়েট টেস্ট এবং ল্যাবরেটরি বেজড টেস্ট। ইতোমধ্যে তিন চারটা কোম্পানিকে এফডিএ অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে পরীক্ষার। আমেরিকা, ভারতে র্যাপিড টেস্টিং কিট ব্যবহারে ফলস নেগেটিভ এবং ফলস পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে। ফলে চায়নার তৈরি এসব কিট ব্যবহার বন্ধও করেছে। তবে এগুলো কিটের দোষ না। এগুলোর সঙ্গে দুর্নীতি জড়িত। র্যাপিড টেস্ট রেজাল্ট কম্প্রোমাইজ করে। নিউ ইয়র্কে নিজেদের তৈরি কিটের অনুমোদন দিয়েছে এফডিএ। জার্মানে তারা নিজেরা ইন্টারনাল ভ্যালুয়েশন করে ব্যবহার করছে। অনেক দেশ নিজেদের এন্টিবডি টেস্ট কিট তৈরি করছে। বাণিজ্যিকভাবেও হয়তো চলে আসবে বলে মন্তব্য করেন ডা. লিয়াকত।
ল্যাবরেটরি বেজড টেস্টের পাশাপাশি র্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার পরামর্শ হচ্ছে প্রথমে ল্যাব বেজড টেস্ট করা। ল্যাবে টেস্ট করলে নতুন কোনো কিট এলে, তখন দ্রুত সেটাকে তুলনামূলকভাবে পরীক্ষা করে স্ট্যান্ডার্ড মিলিয়ে দেখা যায়।’