জিহাদি জীবন থেকে পালিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ তানিয়া জর্জেলাস। বিয়ে করেছিলেন এক আইএস জঙ্গিকে। জন জর্জেলাস নামের শীর্ষ ওই মার্কিন জঙ্গিকে পরে ডিভোর্স দেন তানিয়া। ২০১৩ সালে জিহাদি জীবনধারা ত্যাগ করেন। তার স্বামী এখনও আইএস’র সঙ্গেই আছে। আর তানিয়া বর্তমানে বসবাস করছেন মার্কিন শহর ডালাসে।
ইয়াহু লাইফস্টাইলের এক প্রতিবেদনে তানিয়ার গল্প উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, তানিয়া ও জন জর্জেলাসের সাক্ষাৎ ও বিয়ে হয় ২০০৪ সালে। জন জর্জেলাস ইয়াহিয়া আল বাহরুমি বা ইয়াহিয়া দ্য আমেরিকান নামেও পরিচিত। বলা হচ্ছে সে আমেরিকায় আইএসের শীর্ষ নেতা। আর তানিয়া হলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক। তিনি মুসলিম ভাবধারায় বেড়ে ওঠেন। টেক্সাস থেকে আসা জর্জেলাসের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। জর্জেলাসের বাবা মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন ডাক্তার। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার পরপরই তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। কাকতালীয়ভাবে, ইতিহাসের এই সংকটকালীন সময়ে তানিয়াও মৌলবাদে আকৃষ্ট হয়েছিলেন।
তানিয়া ও জনের এই গল্প বেশ দীর্ঘ। তবে কার্যকরভাবে তারা একটি দম্পতি হয়েছিলেন এবং দ্রুতই তিন সন্তান বিশিষ্ট একটি পরিবারে পরিণত হয়েছিলেন, যারা জেহাদ ও সন্ত্রাসবাদের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন। ২০১৩ সালে তারা আইএসে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করেন এবং একই বছরের আগস্টে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। অবশেষে জন তিন সন্তান ও সন্তানসম্ভবা তানিয়াকে নিয়ে সিরিয়া পৌঁছায়। কিন্তু পৌঁছানোর পর তানিয়ার মনোভাব পরিবর্তন হয়। তিনি সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। স্বামীর পিতা-মাতার সহায়তায় তানিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। তিনি আইএসের সঙ্গে থাকা স্বামীকে ডিভোর্স দেন।
দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনে সম্প্রতি তানিয়ার ওপর একটি ফিচার প্রকাশিত হয়েছে। পুরো ফিচারজুড়ে একটি জিজ্ঞাসাই ফুটে উঠেছে, তা হলো- আসলেই কি তানিয়ার মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, ‘একসময় তিনি একটি পরিবারকে দেখাশোনা করতেন ও তাদের গুপ্তহত্যার প্রশিক্ষণ দিতেন। লেখক গ্রায়েম উডের পর্যবেক্ষণ হলো- এখনো তার মধ্যে লক্ষণ আছে, সহিংসতার না, তবে জেহাদের বিষয়ে তাকে যেভাবে ভুল বোঝানো হয়েছে তার স্থায়ী একটি প্রভাবের লক্ষণ রয়েছে। এক সময় তিনি আমাকে বললেন যে, তিনি মনে করেন, শিয়ারা প্রকৃত মুসলিম না। আইএস একটি সুন্নি মৌলবাদী দল, শিয়াদের ঘৃণা করাই যাদের মূল তত্ত্ব। সে কখনোই বলেনি যে, সে সিরিয়ায় ফিরে যেতে চায়। কিন্তু সে শোকাহত হয়েছে যে, অনেক আইএস অনুসারীদের বোমা মেরে ধ্বংস করা হচ্ছে। শুধু এই জন্য যে, তারা একজন খলিফার অধীনে বাঁচতে চেয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা সাধারণ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করার পর তার এ ধরনের মন্তব্য পাওয়া যেতো।’
তার চাপা স্বভাব ও ওইখানকার স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে বেড়ানো সত্ত্বেও তিনি একটি শহরে বাস করছেন। নতুন একজন পুরুষের সঙ্গে নিরিবিলি সময় কাটাচ্ছেন। ম্যাচ ডটকমে তারা একে অপরের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। তারা এখন চার্চে, কনসার্টে ও পানশালায় যান। লেখক উড এ বিষয়টিকে বলেন, তার পরিধেয় পোশাক দেখে মনে হতে পারে যে, তিনি গত কয়েক দশক ইতালির ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন পড়ে কাটিয়েছেন, কোরান নয়।
এখনো তিনি তার জেহাদি স্বামীর জন্য টান অনুভব করেন। তিনি বলেন, আমি তাকে না ভালোবেসে থাকতে পারি না। এই ভালোবাসা কিভাবে যাবে তা আমি জানি না। এই পর্যায়ে এসে জর্জেলাস দম্পতির অবস্থা হলো, জন তার আমেরিকান, খ্রিস্টান, শহরতলীর ধনী জীবন ত্যাগ করে আইএসের একজন সদস্য হিসেবে একজন জিহাদির জীবন বেছে নিয়েছে। আর তানিয়া করেছেন তার উল্টোটা- এখন তিনি ডালাসের শহরতলিজুড়ে নিজের পরিচয় খুঁজে বেড়ান। কিন্তু তাদের গল্প শেষ হবে কিভাবে?
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ০৮ নভেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস