যানজট নিরসনে গত দুই দশকে রাজধানী ঢাকায় তৈরি হয়েছে উড়ালসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি, ইউলুপ ও মেট্রোরেলসহ নানা উড়ালপথ। প্রায় ১০৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এসব উড়ালপথের নিচে প্রায় ২০৭ একর জমি রয়েছে। যার বেশির ভাগই অব্যবহৃত, দখল ও অপব্যবহার করা হচ্ছে। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় এসব জমি খালি বা দখলে থাকায় নগর সম্পদের অপচয় হচ্ছে। যার বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাবের ফলে প্রতি বছর সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যগত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা।
সম্প্রতি এসব তথ্য জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অর্থায়নে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবানিজমের (সিআইএইউ) এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
গত রোববার বিকালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিআইএইউর সেমিনার রুমে এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সিআইএইউর নির্বাহী পরিচালক স্থপতি অধ্যাপক ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান ও ইউএনডিপির সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক।
অধ্যাপক ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ জানান, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচে বেশকিছু জায়গায় পার্কিং, পাবলিক টয়লেট, পুলিশ বক্স, মসজিদ, অস্থায়ী কাঁচাবাজার, ময়লা ফেলার ভাগাড় এবং ছোট দোকান গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও অন্ধকারে ছিন্নমূল মানুষের থাকার জায়গা চোখে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় নিম্নবিত্ত ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা জীবিকা নির্বাহ ও পথশিশুরা খেলাধুলার জন্য ব্যবহার করছে। অনেক সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলোতে মাদকসেবন ও মাদক কেনাবেচা হয়। পথচারীদের জন্যও এটি নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে সবুজায়ন করতে দেখা গেছে। মূল বিষয় হলো, সামগ্রিকভাবে এ নিয়ে কোনো নীতিমালা নেই। ফলে বেশির ভাগ জমির সুষম ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি।
ড. আদনান আরো বলেন, ‘বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বর্তমানে ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড স্ট্রাকচারের নিচের অংশে জনবান্ধব, টেকসই ও সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহার উপযোগী কমিউনিটি জোন তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে থাকছে হাঁটাচলার পথ ও সাইকেলের লেন, নগর-কৃষি, বাগান, বনায়ন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা। কিছু জায়গায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও শরীরচর্চাকেন্দ্র, সুইমিং পুল, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং পথনাটক ও শিল্পকর্ম প্রদর্শনের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। উড়ালসড়কের মতো অবকাঠামোর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা।
সিআইএইউ জানায়, এই গবেষণায় ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদের নেতৃত্বে কাজ করেছেন স্থপতি শাফায়েত মাহমুদ, ওয়াসিলা ফাতিমা নিলিয়া এবং মো. ফাহিম হাসান রিজভী। এছাড়া বিভিন্ন ধাপে পরামর্শক হিসেবে যুক্ত ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী খান, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক, অর্থনীতিবিদ ড. সৈয়দ আখতার মাহমুদ, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ প্রমুখ।