সাকিবদের সাথে সানজিদাদের এই বেতন বৈষম্য ঘুচবে কবে?

অর্জনে সবার সেরা কিন্তু বেতনে সবার পেছনে। বাংলাদেশের নারী আর পুরুষ খেলোয়াড়দের বেতনের পার্থক্য আকাশ পাতাল। যে সানজিদা-সাবিনাদের হাত ধরে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব এলো তাদের মাসিক বেতন কিনা সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা! শুধু তাই নয়, ক্রিকেটে যে এশিয়া কাপ জিতেছিল নারীরা তাদের সর্বোচ্চ মাসিক বেতন পৌনে এক লাখ টাকা। অথচ কখনোই বড় আসরে শিরোপা না জেতা সাকিবদের মাসিক বেতন কিনা আট লাখ টাকা! ক্রীড়াক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব আনতে মেয়েদের বেতন বাড়ানোর যে বিকল্প নেই সাবেকরা সেটাই বলছেন।

সানজিদা-সাবিনারা মিরপুরের আকাশে শরতের সাদা মেঘকে উৎসবে রাঙিয়েছেন সাফের সিংহাসনে বসে। যদিও তার রেশ লাগেনি মিরপুরে হোম অফ ক্রিকেটে। তবে ক্রিকেটে ফুটবলের ট্রফির রঙ না লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু এশিয়া কাপের এই ট্রফিটাই যদি জিতে আসতেন সাকিব-মুশফিকরা? ভাবা যায় মিরপুরের অবস্থা তখন কেমন হতো!

তবে ঠিকই জাহানারা-সালমারা এশিয়া কাপ জিতেছিল। সেদিন অবশ্য ছাদ খোলা আকাশে উৎসব হয়নি মিরপুরে। তবে নারীদের কাছে বাস্তব সেই ট্রফিটাই ছেলেদের কাছে আক্ষেপের নাম। এশিয়া কাপ দূরে থাক, আয়ারল্যান্ডের তিনজাতি সিরিজ ছাড়া কোনো ট্রফিই নেই অর্জনের খাতায়। তবু ক্রিকেট যেন দু’হাত ভরে দিয়েছে পুরুষ ক্রিকেটারদের। বিসিবি থেকে সাকিবরা সর্বোচ্চ বেতন পান আট লাখ টাকা। অন্যদিকে, কয়েকবার বাড়ানোর পরও জাহানারা-জ্যোতিদের সর্বোচ্চ বেতন কিনা ৭৫ হাজার টাকা! তার মানে, প্রায় আটগুণ বেতন কম পেয়েও অর্জনে এগিয়ে নারী ক্রিকেট।

ক্রিকেটের মত ফুটবলেও পার্থক্যটা স্পষ্ট। যে সানজিদা-সাবিনারা ইতিহাস লিখলেন, তাদের মাসিক বেতন শুনলে চমকে যেতে পারে যে কেউ। এ ক্যাটাগরিতে বেতন ১২ হাজার, বি তে ১০ আর সি ক্যাটাগরিতে ৮ হাজার টাকা মাত্র। আর পুরুষরা যেখানে লিগে ক্লাবগুলোর কাছে পান ৫০-৬০ লাখ টাকা, সেখানে সানজিদাদের পারিশ্রমিক ৩-৪ লাখ।

সাবেক ফুটবলার রেহানা পারভীন বলেন, বাসের মাধ্যমে তাদের এনে সংবর্ধনা দেয়া হবে। দারুণ! তারা এটা পাওয়ার যোগ্য। তবে এর মধ্যেও আরেকটি বিষয় থেকে যায়। টাকাপয়সার দিকটাও দেখা দরকার। আমাদের দেশের ক্লাবগুলো যেন এ প্রসঙ্গে এগিয়ে আসে। তাহলে কিন্তু ক্লাবগুলোতে মেয়েদের চাহিদা তৈরি হবে। তখন মেয়েরাও গর্ব অনুভব করবে। তারাও ভাববে, আসলেও হয়তো আমরা ভালো প্লেয়ার।

যদিও কথায় আছে, কঠিন সময় নাকি শক্ত মানুষ তৈরি করে। নারীদের সংগ্রামটাই হয়তো তাদের হিমালয় চড়ার সাহস জুগিয়েছে। কিন্তু সেই অর্জন থিতু হতে যে প্রয়োজন আর্থিক নিশ্চয়তা। ছাদখোলা বাসে বরণ করা হবে সানজিদা-সাবিনাদের। হয়তো মিলবে বড় সংবর্ধনা। কিন্তু যে বৈষম্যের ভেতর দিয়ে তাদের এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে, তা কি আদৌ ঘুচবে?