রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ফোনের পরই বরখাস্ত টিটিই!

বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণকারী ‘রেলমন্ত্রীর আত্মীয়’ পরিচয় দেওয়া যাত্রীকে জরিমানা করায় টিকিট পরীক্ষককে (টিটিই) বরখাস্তের ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যদিও রেলমন্ত্রী দাবি করেছেন-ওই যাত্রীরা তার আত্মীয় নন, তিনি তাদের চেনেনও না। তবে রেলমন্ত্রী ওই যাত্রীদের আত্মীয় পরিচয় না দিলেও তার স্ত্রীর নির্দেশেই টিটিইর বরখাস্তের আদেশ হয়েছে বলে দাবি করেছে ওই যাত্রীদের পরিবার।

সেদিনের ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আজ রোববার পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ডিসিও কার্যালয়ে বরখাস্ত হওয়া টিটিই শফিকুল ইসলামকে তলব করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার বিনা টিকিটে এসি কেবিনে ওঠা তিন যাত্রীদের মধ্যে লিখিত অভিযোগ দেওয়া ইমরুল কায়েস প্রান্ত’র মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা নিজেকে মন্ত্রীপত্নী শাম্মী আক্তার মণির মামাতো বোন দাবি করেন।

নিপা বলেন, মন্ত্রীপত্নী শাম্মী আক্তার মণিকে ছেলের সঙ্গে টিটিই শফিকুলের বাগবিতণ্ডার ঘটনাটি জানানোর পরই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মণির আমি আপন মামাতো বোন। কেউ না হলে তিনি আমার বাড়িতে ঈদ করতেন না। ঈদের আগে শনিবার তিনি আমার বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় চলে যান। আমি রান্নাবান্না করে দিয়েছি, রাতে পৌঁছে সেগুলোই গরম করে খেয়েছেন তারা।’

এ বিষয়ে টিটিই শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কারো সঙ্গে অশোভন আচরণ করিনি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে, আমি ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। সেদিন যা ঘটেছে, আমি সেটাই বলব। এরপর স্যারেরা যে ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন।’

তিনি আরও জানান, মন্ত্রীর স্ত্রীই তাকে ফোন করে টিকিট কেটেই ওই যাত্রীদের ট্রেনে পাঠানোর কথা বলেন। তবে ওই তিন যাত্রী দাবি করেছেন, তারা কাউন্টারে এবং অনলাইনে টিকিট পাননি।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের দাবি, টিকিট করানোর জন্য টিটিই শফিকুলকে বরখাস্ত করা হয়নি। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করায় বরখাস্ত করা হয়েছে।

এদিকে, টিটিই শফিকুলকে মানসিক বিকারগ্রস্ত বলেছে রেলওয়ে। মন্ত্রীর আত্মীয় ও যাত্রীদের বরাত দিয়ে রেলওয়ে এমন অভিযোগও তুলেছে যে, ঘটনার সময় টিটিই নেশাগ্রস্ত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডিসিও নাসির উদ্দিন বলেন, টিটিই শফিকুল ইসলাম হীনমন্যতায় ভোগেন। তিনি এর আগেও যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। ফলে, যাত্রীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ওই তিন যাত্রীর পরিচয় : লিখিত অভিযোগ দেওয়া যাত্রী ইমরুল কায়েস প্রান্তর বাবা মুজাহিদুল ইসলামের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায়। তবে তারা নানার বাড়ি ঈশ্বরদী পৌর এলাকার নূর মহল্লায় থাকেন। এ ছাড়া অপর দুই যাত্রী হাসান এবং ওমর ইয়াসমিন আক্তার নিপার মামাতো ভাই। এর মধ্যে হাসান একই মহল্লার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। আর ওমর একই মহল্লার আব্দুর রহমানের ছেলে।

ট্রেনযাত্রী হাসানের ভাই হোসেন বলেন, রেলমন্ত্রীর স্ত্রী টিটিই শফিকুলকে ফোন করে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে তিন আত্মীয়ের ঢাকায় যাওয়ার বিষয়ে জানান। এ সময় তাদের টিকিট কেটে দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

গত ৪ মে রাতে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ওঠেন প্রান্ত, ওমর ও হাসান নামের তিন যাত্রী। এ সময় কর্তব্যরত টিটিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে বসা ওই যাত্রীদের টিকেট দেখতে চান। ভাড়া নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই তিন যাত্রী নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে এসি কামরা থেকে শোভন কামরায় পাঠান। ওই তিন যাত্রী শোভন কামরাতেই ঢাকা পৌঁছান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইল ফোনে টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়।