টেবিলে পা তুলে ঘুমাচ্ছেন কলেজের অধ্যক্ষ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কিছুদিন ধরেই ভাইরাল হয়েছে একটি ছবি। তাতে দেখা গেছে, ক্লাসরুমের ভেতরেই শিক্ষিকা টেবিলে মাথা ভর করে ঘুমাচ্ছেন। হঠাৎ সেখানে হাজির হয়েছেন এলাকার চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। তারপর ছবি তুলে ছাড়তে না ছাড়তেই সেটি পৌছে যায় লাখো মানুষের হাতের মুঠোয়। পরে অবশ্য শিক্ষিকা তার অসুস্থতার কথা প্রকাশ করে ক্ষমাও চেয়েছেন। এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ না হতেই সামনে এলো আরো একটি ছবি। যেটিতে টেবিলের উপর পা তুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমানোর দৃশ্য দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি খুলনা সরকারি বিএল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম। তার অফিস রুমেই এমন অবস্থায় ছবিটি তুলে সেটি আবার প্রকাশ করা হয়েছে ফেসবুকে।
ইফতেখার সাদাত নামে খুলনার একজন স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ কর্মী ফেসবুকে ছবিসহ স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘‘ইনি কে! শুধুমাত্র খুলনার কয়েকজন লিজেন্ড পারবে উত্তর দিতে যেহেতু সে একটা ঐতিহ্যবাহী কলেজের (অর্নাস) প্রিন্সিপাল তাই নাম বললাম না…। ছবিটা পোষ্ট করতাম না কিন্তু এটা একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর তিনি তার প্রধান তার কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না…কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আন্তরিক দুঃখিত…।’’

ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করতে না করতেই সাধারণ মানুষ ও ছাত্রসমাজ হুমড়ি খেয়ে পড়েন। শুরু হয় বিভিন্ন রকম আলোচনা সমালোচনা। অনেকে অনেক রকম যুক্তি দেখালেও বেশিরভাগ মানুষ বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। তাদের মতে, আর যাই হোক বিএল কলেজের মতো খুলনার স্বনামধন্য একটা কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে তার এমন কাজ করা আদর্শ বহিঃর্ভূত।
অমিত দেবনাথ নামে একজন কমেন্ট করেছেন, ‘কলেজ তো প্রন্সিপালের বাবার সম্পত্তি, একটু পা না হয় উপরে উঠিলেন তাতে এমন কি আসে যায়!’’

গাজী আলাউদ্দিন নামে একজন কমেন্ট করেছেন, ‘‘যা‌দের নৌকার মা‌ঝি হওয়ার যোগ্যতা নেই তা‌দের জাহা‌জের ক্যা‌প্টেন বানা‌লে এরকম হয়।’’

এসএম সোহেল নামে একজন কমেন্ট করেছেন, ‘‘বলতে ভয় করবো না, তারা আওয়ামীলিগের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে খারাপ আচারণ করে।’’

অনেকে আবার রসিকতা করে অনেক কমেন্ট করেছেন। এম ডি ওহিদুজ্জামান ওহিদ লিখেছেন, ‘‘আগের একটা পোষ্টের কথা মনে পড়ে গেলো, শিরোনাম ছিলো এই তিনি একজন শিক্ষিকা এবং তিনি একজন মা ও বটে ঠিক সেই রকম এনাকে নিয়েও বলা যায় তিনি একজন শিক্ষক তিনি একজন বাবাও বটে!’’

হাফিজ শামিম নামে একজন লিখেছেন, ‘‘ওনার কি ভিমরতি ধরলো নাকি!’’

জানা গেছে, বিএল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তার রাজনীতির পক্ষ টেনে অনেকেই আবার এমন ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার বিরোধীতাও করেছেন।

রাকিব মোড়ল নামে একজন লিখেছেন, ‘‘ছোট ভাই (সাদাত) মনে রাখতে হবে স্যার কিন্তুু আমাদের আওয়ামীলীগের লোক। উনা কে নিয়ে এগুলো করা ঠিক হয় নাই।’’

নাহিয়ান আবিদ নামে একজন লিখেছেন, ‘‘সাদাত ভাই তুমিও হুজুকে নাচতেছ। তার সম্পর্কে ভাল করে জেনে পোস্টটা দেয়া উচিত ছিল। স্যারের হয়ত এভাবে পা দেয়া টা বেমানান কিন্তু সেটার পরিস্থিতি বোঝা দরকার।’’

মাহমুদ হোসাইন রাজিব লিখেছেন, ‘‘ব্যাক্তিগত সময় অবশ্যই রিল্যাক্স করবেন। চেম্বারটির অবশ্যই প্রাইভেসি আছে তোমরা প্রাইভেসি নষ্ট কর কেন।’’

অনির্বান অনি নামে একজন কমেন্ট করেছেন, ‘‘নিজের কর্মস্থলে নিজের টেবিলের উপর পা তুলবেন কি তুলবেন না সেটা তার ব্যাপার। তিনি নিশ্চয়ই টেবিলে পা তোলার আগে ফেসবুকের জনমত যাচাই করতে যাবেন না। আর বইটা টেবিলের এক পাশে আর তার পা টেবিলে অন্যপাশে।’’

\"\"

অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে মাহবুবুর রহমান মুন্না নামে একজন লিখেছেন, ‘‘একজন ৫৫ ঊর্ধ্ব অধ্যক্ষ (বিএল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম)কি অসুস্থ হতে পারেন না? ক্লান্ত হতে পারেন না? পারেন। অসুস্থ হয়ে (হঠাৎ পেসার উঠে) তিনি যদি নিজ চেয়ারে শুয়ে পড়েন। একটু আরামের জন্য টেবিলে পা তুলে দেন। তাতে কি বা অপরাধ। কাজের মধ্যে শারিরীক অবস্থা যে কোনো ব্যক্তির খারাপ হতে পারে। স্যারের এই অসুস্থ অবস্থায় বিশ্রাম নেওয়ার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো এটা কোন ধরণের কাজ। কোন কিছু বিবেচনা না করে, না জেনে শুনে একজন ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করা মানুষকে এভাবে হেয় করা কোন ধরণের ভদ্রতা। যে শিক্ষক আমাদের কোনটা উচিত কোনটা উচিত নয় তাকে কি আমরা শিখাবো টেবিলে পা তুলতে নেই। তিনি তো এটা জানেন। তাহলে বুঝতে হবে এর পেছনে কোন কারণ আছে। আসলে এটা মূল কথা নয়। স্যার আসার পর অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাজের অসুবিধা হচ্ছে। তারাই স্যারকে হেয় করার জন্য তার অসুস্থ অবস্থার ছবির ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। অধ্যক্ষ স্যার আসার পর কলেজের অনেক উন্নয়ন ও উন্নতি হয়েছে। যা বিগত ৪০-৫০ বছরেও হয়নি। বন্ধ হয়েছে ক্যাম্পাস ও হোস্টেলের মাদকের ব্যবসা ও আসর। একইভাবে বন্ধ হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এ বিষয়ে পত্রিকায় রিপোর্টও হয়েছে। এগুলো যারা সহ্য করতে না পারছেন তারাই স্যারকে ছোট করতে চাচ্ছেন।’’

বাংলাদেশ সময়ঃ১৭৩০ ঘণ্টা, ২১ অক্টোবর, ২০১৭ , লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস

Scroll to Top