সম্প্রতি প্রতারক চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকাশের নাম ব্যবহার করে নতুন কৌশলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে লোভনীয় বিজ্ঞাপনও প্রচার করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকাশ নাম ব্যবহার করে প্রচার করা পোস্টে ‘প্রতিদিন বিনা পরিশ্রমে ১ হাজার ২০০ টাকা পাওয়ার কথা’ও বলছে প্রতারকরা। কোথাও কোথাও দেখানো হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন করলেই ৫ হাজার টাকা দেওয়ার লোভও। অনেকেই তাদের এই ফাঁদে পড়ে রেজিস্ট্রশন করছেন। ভুক্তভোগীরা নিজে টাকা না পেয়েও তাদের শর্ত মানতে গিয়ে টাকা প্রাপ্তির কথা বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে প্রচারও করছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কাঙ্ক্ষিত টাকা পাচ্ছেন না। আর এ জন্য হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা সরাসরি দুষছেন ‘বিকাশকেই।
অনেকেরই করোনাকালীন এই সময়ে বিভিন্ন কারণে সশরীরে বাজার-শপিংমলে গিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সময় হয় না। এছাড়া, করোনা-সংক্রমণ এড়ানোর জন্যও কেউ কেউ অনলাইনের ওপর ভরসা করছেন। অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে প্রতারণার অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেকেরই। এই অভিযোগের বাইরে নেই ফেসবুক পেইজে খোলা ছোট কোম্পানি থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত অনেক কোম্পানিও। সঠিক গুণগত মানের পণ্য না দেওয়া, দামে বেশি নেওয়া, সময়মত ডেলিভারি না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এসব কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে কয়েকজন এই ধরনের হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানাগেছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে স্কুল শিক্ষিকা উম্মে রেহানা কাজল বলেন, ‘আমার কাছে একটা ম্যাসেজ আসে। যেখানে লেখা আছে, রমজান উপলক্ষে সরকার সবার বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৫ হাজার টাকা উপহার দিচ্ছে। এই উপহার পাওয়ার জন্য আমাকে একটি লিংকে ক্লিক করতে হবে।’
ঢাকার গৃহবধূ রেহানা আক্তারও এই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে একটি লিংকসহ মেসেজ দেওয়া হয়েছে। আর বলা হয়েছে ওই লিংকে ক্লিক ১ হাজার ২০০ টাকা আসবে। এরপর আমি ক্লিক করি। তখন পরপর দুটো ধাপ আসে। প্রথম ধাপে কিছু তথ্য দিতে হয়। নাম, বয়স, পেশা, বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর ইত্যাদি। এই তথ্য পূরণ করে রেজিস্ট্রেশন শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আমার নম্বরে কাঙ্ক্ষিত টাকা চলে আসবে বলেও জানানো হয়।’
এই গৃহবধূ আরও বলেন, ‘একসময় আমার কাছে মেসেজ আসে, আমি টাকা পেয়েছি, এই কথা স্বীকার করে অন্তত ১৪ জনকে যেন মেসেজ পাঠাই। তাহলেই আমার মোবাইলে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত আসতে পারে। কিন্তু আমি ১৪ জনের কাছে এই মেসেজ দেওয়াসহ সব ধাপ অতিক্রম করার পরও কোনো টাকা আসেনি।’
১৪ জনকে মেসেজ দিলেই বিকাশ থেকে গ্রাহকের কাছে সরকারের উপহারের টাকা যাবে, এমন প্রতারণা প্রসঙ্গে বিকাশের পাবলিক রিলেশন ও করপোরেট কমিউনিকেশন প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘এসব প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন বিকাশের নয়। একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে এসব চাতুরির মাধ্যমে মানুষজনদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বারবার গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন দিয়ে আমরা বলছি, বিকাশের সব সেবার তথ্য আমাদের ওয়েবসাইট, ভেরিফাইড পেজ ও গণমাধ্যমের সাহায্যে জানিয়ে থাকি। এর বাইরে যেকোনো তথ্য সন্দেহজনক অথবা প্রতারকদের অপচেষ্টা।’
বিকাশ কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে এই ধরনের প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে? এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘আমরা এ ধরনের প্রতারণামূলক পোস্টের খবর পাওয়া মাত্রই সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ টিমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জানাই। আইন অনুযায়ী তারাই ব্যবস্থা নেবে। তবে এমন প্রতারণার ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানাই।’
অনলাইনে এইসব প্রতারণা বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, জানতে চাইলে সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ বলেন, ‘প্রলোভনে পড়ে অনলাইনে কোনো আর্থিক লেনদেন করবেন না। কোনো কোম্পানির নাম বললে সেই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে লেনদেন করবেন। তারপরও কেউ প্রতারণার ফাঁদে পড়ে লেনদেন করে ফেললে, আপনার নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে প্রমাণসহ অভিযোগ করুন, পুলিশ প্রতারকদের ধরার ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।’
পাশাপাশি এই রকম অস্বাভাবিক কোনো প্রস্তাব পেলে সোহেল আহমেদ তা এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।