কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) সম্মানী ভাতা বাবদ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রস্তাব করেছে। এত বড় অংকের সম্মানী ভাতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, বিভিন্ন সভার জন্যই এই সম্মানী ভাতার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান বাছাই করে তাদেরকে অনুদান প্রদান এবং প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্যই প্রস্তাব করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের ওই প্রকল্পের নাম ‘একসিলারেটিং অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং স্কিল ফর ইকোনমিক ট্রান্সফরমেশন’।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠকে ওই প্রকল্পের নানা খাতে ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রকল্পটি এখনো চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পায়নি। সামনে আরও সভা হবে, ব্যয় কাটছাঁট হবে। পরিকল্পনা কমিশন আামাদের কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে, সে অনুযায়ীই ডিপিপি প্রস্তুত করা হবে।
প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ হাজার ২৯২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৭২১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প ঋণ ২ হাজার ৫৮০ কোটি টকা। জুলাই ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর জানায়, প্রকল্পটির মাধ্যমে মহিলা এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীসহ বাংলাদেশি যুবক ও কর্মীদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরির লক্ষ্যে তাদেরকে চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল হিসেবে তৈরি করা হবে। ফলশ্রুতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমসমাজ সৃষ্টি হবে এবং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এ পর্যায়ে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রস্তাবিত প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যেন আরও বস্তুনিষ্ঠ, সুনির্দিষ্ট এবং মানসম্পন্ন করে উপস্থাপন করা হয় সে বিষয়ে সদস্য নাসিমা বেগম সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, প্রকল্পের প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা সভা করেছি। কিছু খাতের ব্যয় আমাদের কাছে বেশি মনে হয়েছে। সেগুলো ঠিক করে পুনরায় প্রকল্পের প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।
প্রকল্পের লিড বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং অংশীদার বাস্তবায়নকারী সংস্থা অর্থাৎ পার্টনার ইম্পিমেন্টিং এজেন্সি (পিআইএ) হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ কাজ করবে।
প্রকল্পে তিনটি অনাবাসিক ভবনের ব্যয় বাবদ ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয় চাওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। তিনটি ভবন বাবদ ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ পরিকল্পনা কমিশনকে জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ৮তলা ভবনের ৪টি তলা উধ্বমুখী সম্প্রসারণপূর্বক ১২তলা করা হবে এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ১০তলা ভবনের ঊর্ধমুখী সম্প্রসারণ করে ১১তলা করা হবে। এছাড়া একটি আন্তর্জাতিক মানের মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিটিউট স্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে আইএমইডির প্রতিনিধি বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে দক্ষতা উন্নয়ন। এ ধরনের প্রকল্পে অবকাঠামো উন্নয়নমূলক খাত থাকলে প্রকল্প সমাপ্ত করতে বিলম্ব হয়। এ ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত নতুন আন্তর্জাতিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জমি নির্ধারণসহ অধিগ্রহণ কাজের এখনো কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় এটি প্রকল্পের ধীরগতির কারণ হতে পারে। আন্তর্জাতিক মানের মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিটিউট স্থাপন খাতের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে নির্ধারিত স্থান, ভূমি অধিগ্রহণের প্রত্যয়ন, ভবনের ডিজাইন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সকলে একমত প্রকাশ করেন।