স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ মনে করেন যে, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে আরো কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে।
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) বিকেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা জানান।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার ১৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এ ১৮ দফা নির্দেশনা সারা দেশে কার্যকর হচ্ছে এবং পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া না পর্যন্ত তা দুই সপ্তাহ বলবৎ থাকবে।
ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, শীতকালে যখন দেশে করোনার সংক্রমণ কম ছিল, তখন যে চরম অনিয়মগুলো হয়েছে, সেই অনিয়মের ফলেই বর্তমানে সংক্রমণের হার বাড়ছে। এই অনিয়মের নেতৃত্বে ছিল সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যেমন- পৌরসভা নির্বাচন। এ সময় দেশে অসংখ্য পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘পৌর নির্বাচনের সময় ব্যাপক মিটিং-মিছিল, জনসভা, শোভাযাত্রা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া- এগুলো হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে কেউ মাস্ক ব্যবহার বা স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। সেদিক থেকে বলা যায়, এসব কর্মকাণ্ডে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নেতৃত্ব দিয়েছে। ’
তিনি বলেন, সরকারের এমন কার্যক্রম দেশের সাধারণ মানুষও অনুসরণ করেছে। ফলে বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের মিলনমেলা, বেড়াতে যাওয়া, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, এমনকী বইমেলা আয়োজন হয়েছে। এসব থেকে মনে হয় আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো করোনার সংক্রমণ যে আবারও বাড়তে পারে, বিষয়টি তাদের ধারণাতেই ছিল না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক এ পরিচালক বলেন, শীতকাল, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ কম থাকলেও মার্চ থেকে সংক্রমণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। মার্চ মাস শেষ হতে চলেছে, কিন্তু সরকারের পদক্ষেপ জোরালো হচ্ছে না। এই যে সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা দেখা গেলো, সে ক্ষেত্রে আমাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপ কী? বড় কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া হয়েছে? হয়নি।
‘চিন্তা করে দেখেন, এর মধ্যে বইমেলাও শুরু হলো। সুতরাং আমাদের অপরিণামদর্শী কার্যক্রম ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে না পারার অক্ষমতার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। গত দু’দিন বিগত এক বছরের মধ্যে সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ। তারপরেও সরকারের ঘোষণা হতাশাজনক। ’
সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনার সমালোচনা করে এই পরিচালক আরও বলেন, সরকার বলছে রাত ১০টার পর বাসা থেকে বের হওয়া সীমিত করতে হবে। রাত ১০টার পরতো এমনিতেও লোকজন খুব প্রয়োজন না হলে বাসাতেই থাকে। সারাদিন তাহলে লোকজন ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াবে? সংক্রমণের জন্য সামান্য সময়ই যথেষ্ট। প্রতিটা পদক্ষেপ প্রায় একই রকম। আবার অফিস আদালতে অর্ধেক লোক যাবে, এসবের অর্থ হচ্ছে বিষয়টার গুরুত্ব না বোঝা। যেখানে ব্রিসবেন মাত্র ২৫ জন শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে লকডাউনে চলে গেছে, সেখানে আমাদের পাঁচ হাজার শনাক্তের পরেও কার্যক্রম দেখেন! সুতরাং বর্তমান করোনা পরিস্থিতি আমাদের অযাচিত আচরণের ফল।
বে-নজির আহমেদ বলেন, করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্য ক্ষিপ্রতার সঙ্গে যে ব্যাপক কার্যক্রম আমাদের নেওয়া দরকার ছিল, সেটারও অনুপস্থিতি আমরা দেখছি। সুতরাং সামনের দিনে সংক্রমণ বাড়ার হার অব্যাহত থাকবে, যদি না আমরা খুব কঠোর ব্যবস্থা নিই।
:বাংলানিউজ