আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আজ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ষোড়শ সংশোধনীর ওপর রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে তার এই আলোচনায় আসা। আলোচনা এখন তুঙ্গে। তবে তা পরিষ্কার নয়। সবকিছুতেই একটা ভাসা-ভাসা ভাব। কিছুটা কুয়াশাঘেরা। তবে দুর্নীতির অভিযোগসহ ১১ অভিযোগের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কাছ থেকে ‘গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা’ না পাওয়ায় ঘোলাটে আবহাওয়া কিছুটা হলেও পরিষ্কার হয়েছে। সেই সঙ্গে পাঁচ বিচারপতির ভূমিকা বিষয়টিকে দেশবাসীর সামনে আরো পরিষ্কার করে তুলে ধরতে সাহায্য করেছে।
তবে প্রশ্ন দাড়ায়, নৈতিক স্খলন, দুর্নীতিসহ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য হলে কি হতে পারে? অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার জেল-জরিমানা হতে পারে। কেননা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তবে প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন তার দেওয়া রায়গুলোয় ওপর এর কোনও প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন আইন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন,১১ অভিযোগের যেকোনও একটি প্রমাণিত হলেই তাকে শাস্তি পেতে হবে।
১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার আগে প্রধান বিচারপতি একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে যান। এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক করেন। পরে ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সই করা একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।
প্রধান বিচারপতি সিনহা বিদেশে যাওয়ার আগে বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রুটিন ওয়ার্কের বাইরে প্রশাসনিক কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি পালিয়ে যাচ্ছেন না। তিনি অসুস্থ বলে যা দাবি করা হয়েছে, সেটিও ঠিক না।
এরপর সুপ্রিম কোর্ট থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়,৩০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির কাছে প্রধান বিচারপতি বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ হস্তান্তর করেন রাষ্ট্রপতি। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির সহকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন যে, গুরুতর অভিযোগগুলো প্রধান বিচারপতিকে জানানোর। এ বিষয়ে তাকে অবহিত করে সহকর্মীরা কোনও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ও সুদত্তর না পেয়ে অভিযোগসমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে বিচারকাজ পরিচালনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলেও জানান।
১১ অভিযোগের কথা ওঠার পর প্রশ্ন ওঠে এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রধান বিচারপতির কী হবে? অভিযোগ কিভাবে তদন্ত হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি যে রায়গুলো দিয়েছেন সেগুলোর বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কিনা?
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা বা তদন্ত করা যায় কিনা সে বিষয়ে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান ও পরবর্তীতে মামলার ভিত্তিতে তদন্ত করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনে কোনও বাধা নেই। যেহেতু আইনের চোখে সবাই সমান,কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় সেহেতু দুদক ইচ্ছে করলে অনুসন্ধান করতে পারে।’
অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রধান বিচারপতির দেওয়া রায়গুলো রিভিউয়ের বিষয় আসবে কিনা- প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘না এ ধরনের কোনও বিষয় ঘটবে না। কারণ তিনি এককভাবে রায় দিয়েছেন এমন নয়।’
যদি কোনও রায়ে তার অংশ বাদ দিলে সিদ্ধান্ত দুই/দুই হয়ে যায় সেক্ষেত্রে করণীয় কী হবে- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘সেটা পরে বিবেচনা করা হবে।’ প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কী হবে প্রশ্নে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে জেল হবে। এর বাইরে কিছু না।’
অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রধান বিচারপতির দেওয়া রায়গুলো রিভিউয়ের বিষয় আসবে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা হবে না। কারণ তিনি এককভাবে রায় দেননি।’
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ১৭ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস