ঝুঁকিতে থাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নেই কোন স্বাস্থ্যবিমা

  • পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছাড়া ঢাকা শহর কল্পনাও করা যায় না কারন তাদের অবদানেই পরিষ্কার থাকে এই শহর। স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। কিন্তু তাদের জন্য নেই কোনো স্বাস্থ্যবিমা। স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে জানতে চাইলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, দৈনিক হাজিরার টাকা ছাড়া তারা আর কিছু পান না। সিটি করপোরেশন থেকেও স্বাস্থ্যবিমা না থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এ নিয়ে কাজ চলছে বলে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, বিনা খরচে সাধারণ চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা থাকলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেখানে তেমন একটা যান না।

বিনা খরচের হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কেন যান না, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধানমণ্ডির ওই হাসপাতালটিতে সব এলাকার পরচ্ছিন্নতাকর্মীরা যেতে চান না। কারণ দূরত্ব। যাতায়াত খরচ ও সময় বিবেচনা করেই তারা নিজেদের মতো করে ধারে কাছের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সূত্র জানায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি নিজস্ব হাসপাতালের মাধ্যমেও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ডিএনসিসি।

জানা যায়, ডিএনসিসির পুরনো ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৬টিতে নিজেদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে প্রায় দুই হাজার ৮০০ জন। বাকি ৮টি ওয়ার্ডে বেসরকারি পর্যায়ে এক হাজার ৫০০ জন এবং নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে আরও ৪৫০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত আছেন। এছাড়া তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বাসা বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য আছে লোকবল।

সিটি করপোরেশনের দাবি, নিজেদের কর্মীদের স্বাস্থ্যগত বিষয়ের পুরোটাই দেখভাল করছেন তারা।

ডিএনসিসির অঞ্চল-২ এর ২ নম্বর ওয়ার্ডের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা দৈনিক হিসেবে হাজিরা পাই। এর বাইরে আমাদের জন্য কিছু নাই। আমাদের রোগ বালাই হলে সিটি করপোরেশনের একটা হাসপাতাল আছে। কিন্তু অসুস্থ হলে এতদূর যাওয়াই সমস্যা। তাই আশেপাশের কোনো হাসপাতালেই যেতে হয়। সেখানে যে খরচ হয় সব আমাদের। আবার অসুস্থ হয়ে কাজে যেতে না পারলে সেদিনের হাজিরা মাইর যায়।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন পর্যায়ে গড়ে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দৈনিক ৬০০ টাকা হারে হাজিরা ভাতা পেয়ে থাকেন।

তালতলা এলাকার আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, আমরা যেভাবে কাজ করি, তাতে আমাদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা দেওয়া উচিত। শহরের সব ময়লা আমরা পরিষ্কার করি। অথচ আমাদের জন্য কিছুই নাই। মাঝে একবার শুনছি যে বিমা দেবে, কিন্তু আর কোনো খবর নাই।

এই দুই কর্মী ছাড়াও ডিএনসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত বেশ কয়েকজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র জানা যায়। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের অভিজ্ঞতা বা অভিযোগ যেমনই থাকুক না কেন নিজেদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন বলে দাবি ডিএনসিসি কর্তাদের। সরকারি নিয়মের মধ্যে থেকেই কর্মীদের সার্বিক দেখভাল করা হচ্ছে বলে জানান তারা।

ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান কমোডর এম সাইদুর রহমান বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের চিকিৎসার জন্য আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। তাদের সব চিকিৎসা সেখান থেকে তারা বিনামূল্যেই পেতে পারেন। আমরা হাসপাতালকে অর্থ পরিশোধ করে দেই। এছাড়া প্রতিদিনকার কাজকর্মে ছোটখাটো কিছু হলে সেটাও দেখা হয়। এর বাইরে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশনায় সিটি করপোরেশনের একটি নিজস্ব হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। মহাখালীর কাঁচাবাজার সরিয়ে সেখানে এটি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই হাসপাতালে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের পাশাপাশি নগরবাসীরাও নাম মাত্র ফিতে আধুনিক চিকিৎসা সেবা পাবেন।

স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কমোডর সাইদুর রহমান বলেন, তাদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু করার কাজটি প্রক্রিয়াধীন। তারা চুক্তিভিত্তিক চাকরি করেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী তাদের সবকিছু দেখভাল করা হয়।

তিনি উল্লেখ করেন, সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কর্মীর বাইরেও বেসরকারি উদ্যোগ এবং একটি তৃতীয় পক্ষের হয়েও কিছু কর্মী কাজ করেন। তাদের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের নয়।

Scroll to Top