বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে যেন গলার কাঁটা। সীমান্তে দিন দিন বড়েই চলেছে বিএসএফের বর্বরতা। ২০০০ সাল থেকে ২০২০- দুই দশকে ১২শ\’ এর বেশি বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে বিএসএফের গুলিতে। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে ঢাকাকে বারবার আশ্বাসের পরও লাশের সংখ্যা তো কমেনি, বরং আরও বেড়েছে।
তবে ভারতের চারপাশে যে প্রতিবেশী দেশগুলো আছে তার মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সব থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ। চীনের সঙ্গে সংঘাত, পাকিস্তানের সঙ্গে চির বৈরিতা, আফগানিস্তানের সঙ্গে জঙ্গিবাদ, মিয়ানমারের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদ, নেপাল-ভুটান-শ্রীলঙ্কার সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপোড়েন আরও কত কী। সেদিক দিয়ে তেমন কোনো বড় বিরোধ নেই ঢাকা-নয়াদিল্লির।
তবুও গুলির ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে সীমান্তে। চোরাচালান বা অপরাধের ধোঁয়া তুলে সীমান্তে অস্ত্র চালানোর বিষয়টি কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ঢাকা সফরেও বিষয়টি উত্থাপিত হলে সীমান্ত অপরাধ কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়। যা নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, অপরাধের সঙ্গে হত্যা মেলালে চলবে না।
সাবেক কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, শ্রলীংকার জেলেরা প্রায় সময় দেখা যায় ভারতের সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে মাছ ধরতে যায়। আর ভারতের নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ড তাদের গ্রেফতার করে। সেই দৃষ্টান্ত তো আমাদের সামনে রয়েছে। শুধু বাংলাদেশের বর্ডারের কেন হত্যাকাণ্ড ঘটছে? স্থল বর্ডার বলে কি এখানে হত্যাকাণ্ড ঘটছে? এবং এ চোরাচালানের সাথে কি শুধু বাংলাদেশিরা জড়িত, নাকি ভারতের কেউ এখানে জড়িত আছে?
মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কমপক্ষে এক হাজার ১৮৫ বাংলাদেশিকে গুলি বা নির্যাতন করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী-বিএসএফ। ২০২০ সালে সর্বাধিক আরও ৫১ জনের মৃত্যু হয়। এ অবস্থায় বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে ওঠা সীমান্ত হত্যার অভিযোগ তদন্ত করতে ভারতকে আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মেজর আমীন আহমেদ আফসারীর মতে, মুখের কথা নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছার দরকার সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে।
তিনি বলেন, সীমান্ত সমস্যার একমাত্র সমাধান গোলাগুলি নয়, হত্যা নয়। এখানে বিকল্প চিন্তা, বিকল্প ভাবনা অবশ্যই করতে হবে। ভারতের সদিচ্ছার ওপরে নির্ভর করছে এ সমস্যার সমাধান। তারা রাজনৈতি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই হত্যা একদম শূন্যে নামিয়ে আনতে পারেন।
আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ঘিরে রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর ভূমিকার জন্য ভারতকে চাপ দেওয়ার পরামর্শ তাদের।