স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন যে, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু স্বাভাবিক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি, গাজীপুরের ডিসি ও কারা কর্তৃপক্ষের তিনটি রিপোর্টই এই মৃত্যুকে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ বলে অভিহিত করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব তদন্ত কমিটির অভিমত এই যে মুশতাক আহমেদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাথরুমে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে গেলে পরে তাকে হাসপাতাল নেওয়া হয়। সুরতহাল রিপোর্টে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিলাম। গাজীপুরের ডিসি, তিনিও একটি কমিটি করেছিলেন, আইজি প্রিজন তিনিও তাৎক্ষণিকভবে একটি কমিটি করেন। সবগুলো কমিটির অভিমত একরকম। তারা ভিডিওফুটেজ ও কারাগারে যারা তার সঙ্গে অন্তরীণ ছিলেন, তার রুমে যে কয়জন ছিলেন, কর্তব্যরত চিকিৎসক যারা ছিলেন, হাসপাতালে যখন নিয়ে গেছেন- তাদের সবার অভিমত নিয়ে তারা যে রিপোর্টটি দিয়েছেন সেই রিপোর্টে বলেছেন, এটা একটা ন্যাচারাল ডেথ হয়েছে। ন্যাচারাল ডেথ মানে অস্বাভাবিক মৃত্যু নয়। সেটাই তারা তাদের ইনকয়ারি রিপোর্টের মাধ্যমে আমাদের জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা সবগুলো রিপোর্টেই এখন পর্যন্ত এটুকুই পেয়েছি। আমরা ফাইনালি পোস্টমর্টেমের রিপোর্টের পরে আরও বিস্তারিত জানতে পারবো। এই পর্যন্ত আমাদের কাছে যা আসছে, এর মূল হলো এটা ন্যাচারাল ডেথ। তিনি বাথরুমে গিয়েছিলেন। ওয়াশরুমে যাওয়ার পর সেখানেই তিনি অজ্ঞান হন। তারপর তাকে কারাগারে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহীদ তাজউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এই ধরনের তদন্তে প্রকৃত বিষয় উঠে আসে না, সেক্ষেত্রে অধিকতর তদন্ত, কেউ কেউ বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথা বলছেন- এ বিষয়ে আপনি কী মনে করছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনি যেগুলো বললেন, এগুলোকে মাথায় রেখেই আমরা মন্ত্রণালয়ে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি টিম করে দিয়েছিলাম। সেখানে ডিসিও তাৎক্ষণিকভাবে একটি এবং কারা কর্তৃপক্ষও একটি টিম করেছিল। আসলে ঘটনাটা কী সেটা জানার জন্য। কাজেই এখানে যদি কারো অনিয়ম বা গাফিলতি কারো থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই জানাতো। এর বাইরে যদি কিছু থাকে সেটা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলে আপনাদের জানাবো।
মুশতাক আহমেদ গত বছরের ৬ মে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় কারাগারে অন্তরীণ হন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদ (৫৩) মারা যান। মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার গাফিলতি ছিল কিনা, যদি থাকে তবে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। এছাড়া গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সবগুলো কমিটিই ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।