২০২২ সালের জুনে যানজট থেকে ‘মুক্তি’!

রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রকট ও জটিল সমস্যাটি হলো যানজট। যা সময় ও কাজ দুটোরই ক্ষতি করে থাকে। গণপরিবহনে দ্রুত ও সহজ যোগাযোগের জন্য রাজধানীতে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। ২০২২ সালের জুন মাসে গাজীপুর-বিমানবন্দর (ঢাকা) অংশের কাজ শেষ হবে। এই রুটটি চালু হলে সাড়ে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সর্বোচ্চ আধাঘণ্টা সময় লাগবে, যা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতে দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রাজধানীতে যানজট নিরসনে গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত ৪২.৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিআরটি নির্মাণের কাজ চলছে। এর একটি অংশ গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত অপর অংশের দৈর্ঘ্য ২২.৪ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষে সংরক্ষিত লেনের মাধ্যমে স্টেশন থেকে প্রতি তিন মিনিট পর পর ছেড়ে যাবে দ্রুতগতিসম্পন্ন অত্যাধুনিক বাস। গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ যেতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা। আর প্রতি ঘণ্টায় ৩০ হাজার যাত্রী পারাপার সম্ভব হবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গাজীপুর-টঙ্গী-বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি সড়ক নির্মাণে ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর একনেক সভায় ‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট)’ অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই বছরেই এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাস্তবায়নকাজ চলাকালে ২০১৮ সালে দুই হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকার এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে চার হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়। সরকারের পাশাপাশি এডিবি, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি), গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (ডিইএফ) অর্থায়নে প্রকল্পটির কাজ আগামী বছরের জুনে শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি একাব্বর হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিআরটি প্রকল্প সম্পর্কে সংসদীয় কমিটিকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ও ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজে ধীরগতি ছিল। কমিটির পক্ষ থেকে যথাযথ মান নিশ্চিত করার মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কাজের গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা বিআরটি কম্পানি লিমিটেডে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান এমডি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ এখন পুরোদমে চলছে। ২০২২ সালের জুন মাসে গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, এই রুটটি চালু হলে গণপরিবহন ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। সাড়ে ২০ কিলোমিটার পথ যেতে সর্বোচ্চ আধাঘণ্টা সময় লাগবে। ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসবে। যাতায়াতের সময় কমে যাওয়ায় বাসের ট্রিপসংখ্যা বেড়ে যাবে। এতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আয় বাড়বে। যাত্রীরা দ্রুততম সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছার ফলে কর্মদক্ষতা বেড়ে যাবে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কের মাঝ বরাবর নির্মিত হচ্ছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের রুট। প্রকল্পে ৪.৫ কিলোমিটার এলিভেটেড ফ্লাইওভার ও সেতু থাকবে, যার মধ্যে ৩.৫ কিলোমিটার ছয় লেনবিশিষ্ট এবং এক কিলোমিটার দুই লেনবিশিষ্ট। এতে ছয়টি এলিভেটেড স্টেশন ও ১০ লেনবিশিষ্ট টঙ্গী সেতু থাকবে। ছয়টি উড়াল সড়ক ও আন্ডারপাস করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৬ কিলোমিটার অ্যাট গ্রেড ও সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড মেইন করিডর নির্মাণ করা হবে। মেইন করিডর সংলগ্ন ১১৩টি বা ৫৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের উন্নয়ন করা হবে। বিআরটি বাস ডিপোসহ বিভিন্ন স্থানে ২৫টি স্টপেজ থাকবে।

আরো বলা হয়েছে, জলজট নিরসনে প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত মোট ২৮ কিলোমিটার ড্রেন ও ১০টি কাঁচাবাজার নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ১৪০টি আর্টিকুলেটেড বাস ক্রয় করা হবে। এই রুটে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করবে পৃথক লেনে। দ্রুতগতির যান চলাচলের জন্য সড়কের মাঝ বরাবর দুই লেন পৃথক করা হবে। সেখানে দ্রুত, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থায় ঘণ্টায় ৪০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে।

Scroll to Top