দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি সংবাদপত্র-আনন্দবাজার পত্রিকা-য় ৩ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে; শিরোনাম-‘উইপোকা’ বাংলাদেশ অর্থনীতিতে টপকাচ্ছে ভারতকে! বিশেষজ্ঞরা বলছেন ‘ক্ষণস্থায়ী’। ভালো করে লক্ষ করুন শিরোনামটি। প্রতিবেদনের বিষয় বাংলাদেশের এবং ভারতের অর্থনীতির তুলনামূলক আলোচনা, বিশেষত সাম্প্রতিককালে এই দুই দেশের প্রবৃদ্ধি বিষয়ে আইএমএফ’এর করা ভবিষ্যৎবাণী।
আইএমএফ-এর করা ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। এই দুই দেশের জিডিপি’র তুলনা সঠিক কিনা সেটাও নিশ্চয় আলোচনা দাবি করে; এই তুলনা বিভ্রান্তিকর বলেই আমার ধারণা। কিন্ত এই প্রতিবেদনের কিছু বাক্য এবং দৃষ্টিভঙ্গী সকলের মনোযোগ দাবি করে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিচয় দেয়া হয়েছে এই ভাবে-‘সেই বাংলাদেশ, যাকে ১৯৭১ সালে পাক-শাসনমুক্ত করে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিল ভারত’। এটা প্রতিবেদনের ভাষা-আমি উদ্ধৃত করেছি মাত্র।
আনন্দবাজার পত্রিকা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে এইভাবেই বিবেচনা করে; অন্যথায় সমর বিশ্বাসের লেখা এই বাক্যগুলো নিশ্চয় সম্পাদকীয় বিবেচনায় ভিন্নভাবে লেখা হতো। আমি একাধিকবার বাক্যটি পড়েছি, আপনারাও পড়তে পারেন-‘সেই বাংলাদেশ, যাকে ১৯৭১ সালে পাক-শাসনমুক্ত করে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিল ভারত।’
কিন্ত সেখানেই শেষ নয়। যদিও প্রতিবেদনে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে যে বাংলাদেশিদের ‘উইপোকা’ কে কখন বলেছিলেন-প্রতিবেদনে লেখা হচ্ছে…‘অসমে এনআরসি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অমিত শাহ বাংলাদেশিদের উইপোকার সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন,‘উইপোকার মতো বাংলাদেশিরা ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে এবং দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করেছে।’
যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ জানিয়েছিল ঢাকা’। অমিত শাহ বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশকারীদের ‘উইপোকা’ বলেছিলেন, কিন্ত আনন্দবাজার এখন তা ব্যবহার করেছে গোটা বাংলাদেশকে বোঝাতেই।
এই প্রতিবেদনের গোড়াতে উইপোকা ছিল উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে কিন্ত প্রতিবেদন শেষ বাক্য নাগাদ তা হয়ে উঠেছে প্রতিবেদকের/ আনন্দবাজারের ভাষ্য-‘পার ক্যাপিটা জিডিপি-র এই ছবি পাল্টাতে খুব বেশি সময় লাগবে না। অর্থাৎ, হাতি এবং উইপোকা থাকবে তাদের নিজের নিজের জায়গাতেই’। আপনি চাইলে শেষ বাক্যটি আবার পড়তে পারেন।